Monday, April 29, 2024

অনলাইনেই খুব সহজে ই-টিন সার্টিফিকেট তৈরী করুন

যে কোনো দেশের সরকারের আয়ের প্রাথমিক উৎস হল কর। অতএব, সরকার একটি ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর প্রদান করেন, যা টিআইএন বা (TIN) নামে পরিচিত। যা সরকারকে ট্যাক্স পেমেন্ট ট্র্যাক করার জন্য একজন ব্যক্তি বা কোম্পানিকে দেওয়া একটি আইডেন্টিফিকেশন নম্বর। বাংলাদেশে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আবেদনকারীকে টিআইএন সার্টিফিকেট প্রদান করে থাকেন। এনবিআরে আবেদন করে কেউ ম্যানুয়ালি বা ইলেকট্রনিকভাবে বাংলাদেশে টিআইএন সার্টিফিকেট পেতে পারেন।

টিন সার্টিফিকেট কি?

বর্তমানে অনলাইনে টিন সার্টিফিকেট করা খুবই সহজ। আপনি চাকুরীজীবি, ব্যবসায়ী বা অন্য যে পেশাতেই থাকুন না কেন, টিন সার্টিফিকেট আপনার জন্য খুবি গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই আমার কথায় অবাক হবেন। অনেকে হয়তো দ্বিমতও পোষণ করবেন। কিন্তু অবাক করার মত হলেও এটা সত্য যে, ইনকাম আছে এমন যে কোন ব্যক্তির জন্যই এই সার্টিফিকেট প্রযোজ্য।

আপনি দেশের একজন করদাতা এবং আপনার একটি ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (Tax Identification number) আছে এ রকম একটি সনদকেই টিন সার্টিফিকেট (Tin certificate) বলা হয়।

টিন (TIN) এর পুণরূপ হলো ট্যাক্সপেয়ার আইডেনটিফিকেশন নাস্বার। বাংলায় যার অর্থ দাঁড়ায় করদাতা শনাক্তকরণ সংখ্যা। আমরা সবাই জানি যে, দেশে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ইনকাম আছে এমন প্রত্যেক ব্যক্তিকে ইনকামের একটি নির্দিষ্ট অংশ সরকারকে ট্যাক্স হিসাবে প্রদান করতে হয়। এটাকে ইনকাম ট্যাক্স বলা হয়। 

ইনকাম ট্যাক্স পরিশোধ করতে হলে ট্যাক্স প্রদানকারী ব্যক্তির অবশ্যই একটি টিন সার্টিফিকেট (TIN) থাকতে হবে। আর সেটি এখন অনলাইনেই করা যায় খুব সহজেই। টিন (TIN) করা মানেই আপনাকে কর দিতে হবে এমনটি নয়। আপনার আয় করসীমার মধ্যে আসলেই তখনি কর পরিশোধ করতে হবে।

বর্তমানে টিন সার্টিফিকেট করতে আয়কর অফিসে যেতে হয়না। শুধুমাত্র আপনার মোবাইল নম্বর ও জাতীয় পরিচয়পত্র (NID Card) দিয়েই এই টিন করতে পারবেন।

বছরে কত টাকা আয় হলে আয়কর দিতে হবে?

টিন থাকলেই আপনাকে কর দিতে হবে না। তবে অবশ্যই আপনাকে আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হবে।

একজন পুরুষের বাৎসরিক আয় তিন লাখ, সব বয়সের নারী এবং ৬৫ বছরের উর্ধে সব নাগরিকের বাৎসরিক আয় সাড়ে তিন লাখ এবং প্রতিবন্ধীদের বাৎসরিক সাড়ে চার লাখ টাকার ওপরে আয় হলে আয়কর দেওয়া বাধ্যতামূলক।

যদি আয় এর কম বা করসীমার নিচে হয়, তাহলে আয়কর দিতে হবেনা। তবে যদি আপনার টিআইএন (TIN) সার্টিফিকেট থাকে, আপনাকে জিরো রিটার্ণ বা শূন্য বিবরণী জমা দিতে হবে।

টিন সার্টিফিকেট কেন দরকারঃ

শুধু ব্যবসা নয়, বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের বাধ্যতামূলকতাবে টিন সার্টিফিকেট তৈরি করার প্রয়োজন পরে।

  • ব্যবসা শুরু করার পর ট্রেড লাইসেন্স নিতে টিন সার্টিফিকেট দরকার হয়
  • গাড়ির মালিক হতে
  • সিটি করপোরেশনের অঞ্চলে থাকা কোনো জমি, ফ্ল্যাট বা ভবন রেজিষ্ট্রেশন করতে টিন সার্টিফিকেট লাগে 
  • ক্রেডিট কার্ড পেতে
  • সঞ্চয়পত্র কিনতে
  • যে কোন কোম্পানির শেয়ার কিনতে
  • নিজের কোম্পানি নিবন্ধন করতে
  • যে কোন পণ্য আমদানির লাইসেন্স নিতে
  • আইনজীবী, চিকিৎসক, প্রকৌশলীদের পেশার চর্চা করতে
  • নির্বাচনে প্রার্থী হতে
  • ব্যবসায়িক সমিতি বা কোনো নিবন্ধিত সংগঠনের সদস্য হতে
  • সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার দরপত্রে অংশ নিতে
  • রাইড শেয়ারিং কোম্পানিতে গাড়ি দিতে

উপরোক্ত ক্ষেত্রে আপনার আয়কর সীমার মধ্যে না আসলেও, আপনার বাধ্যতামূলকভাবে টিন সার্টিফিকেট প্রয়োজন হবে৷

আরো পড়ুন..

টিন সার্টিফিকেটের সূবিধাসমূহঃ

টিন সার্টিফিকেটের প্রথম সুবিধা হলো, আপনি দেশের একজন গবিত কর দাতা হিসেবে নিবন্ধিত হবেন। আপনার দেওয়া আয়কর দিয়ে দেশ চলবে৷

এছাড়া টিআইএন (TIN) থাকার আরো কিছু ব্যক্তিগত সুবিধা রয়েছে যেমন, ব্যাংকে আপনার জমাকৃত অর্থের আয় থেকে ২০% কর কর্তন করা হবে। যদি টিআইএন (TIN) না থাকে তবে ২৫% কর্তন করা হবে। ব্যাংক ঋণ বা ক্রেডিট কার্ড নিতে টিন সার্টিফিকেট থাকতে হবে। বিভিন্ন সময় সরকার বিভিন্ন পেশাজীবি বা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের প্রণোদনা দেয়। এসব সুবিধা নিতেও টিআইএন প্রয়োজন হয়।

টিন সার্টিফিকেট এর অসুবিধাঃ

টিন সার্টিফিকেটের একটিই অসুবিধা তা হচ্ছে, আপনার করযোগ্য আয় থাক বা না থাক, আপনাকে প্রতি বছর অবশ্যই ট্যাক্স রিটার্ণ জমা দিতে হবে।

যদি রিটান জমা না দেন তাহলে আপনার ইনকাম কালো টাকা হিসাবে গণ্য করা  হবে। যদি পর পর ৩ বছর আপনার করযোগ্য আয় শুন্য হয়ে যায় বা আপনার বাৎসরিক আয় করসীমার মধ্যে না আসে, আপনি ৪র্থ বার থেকে রিটার্ণ না দিলেও চলবে৷ তাছাড়া আপনি আপনার আয়কর নিবন্ধন বাতিলের জন্য অবেদন করতে পারবেন খুব সহজেই।

অনলাইন থেকে টিন সার্টিফিকেট বের করার সিস্টেমঃ

আমরা অনলাইন থেকে খুব সহজেই টিন সার্টিফিকেট বের করতে পারি। আপনি ঘরে বসেই অনলাইনে টিন সার্টিফিকেট ফরম পুরণ করে নিজের (ইটিআইএন) টিন সার্টিফিকেট তৈরী ও ডাউনলোড করতে পারবেন।

তাছাড়া আপনার যদি পূর্বের টিন থাকে তা দিয়েও নতুন টিআইএন ডাউনলোড করতে পারবেন। অনলাইনে ই টিআইএন নিবন্ধন করার জন্য নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন।

প্রথম ধাপ: একাউন্ট রেজিষ্ট্রেশন-

রেজিস্ট্রেশন এর জন্য অবশ্যই আপনার একটি ইন্টারনেট সংযোগ থাকা কম্পিউটারের প্রয়োজন হবে। মোবাইল থেকেও করতে পারবেন, তবে সেক্ষেত্রে বিষয়টা একটু কঠিন মনে হতে পারে। তো যাইহোক, প্রথমেই আপনাকে এর জন্য বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ইনকাম ট্যাক্সপেয়ার পোর্টাল ভিজিট করতে হবে।

ওয়েবসাইটে থাকা রেজিস্ট্রেশন বাটন টিতে ক্লিক করার পর সেখানে আপনাকে কিছু তথ্য দিয়ে একটি ইউজার আ্যাকাউন্ট তৈরী করতে হবে। আপনাদের সুবিধার্থে বিষয়গুলি সংক্ষেপে আলোচনা করছি

  • ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ডঃ রেজিস্ট্রেশন পরবর্তীতে লগইন করার জন্য এই দুইটি তথ্যের প্রয়োজন হয়। যথাযথ ভাবে এবং সহজে মনে রাখতে পারবেন এমন ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করাই সবচেয়ে ভালো হবে। কারণ, কোন কারণে আপনি আপনার সার্টিফিকেট হারিয়ে ফেললে পরবর্তীতে এই আ্যাকাউন্টে লগইন করে পুনরায় সেটি ডাউনলোড করতে পারবেন।
  • সিকিউরিটি কোয়েশ্চেনঃ আপনি সহজেই যেটা মনে রাখতে পারবেন এবং সহজেই উত্তর দিতে পারবেন এমন প্রশ্ন নির্বাচন করে উত্তরটাও সহজভাবে লিখুন। আপনি যদি কোন কারণে ইউজার আইডি বা পাসওয়ার্ড ভুলে যান, তবে সেটি পুনরাদ্ধারের জন্য এটি ব্যবহার করতে পারবেন।
  • কান্ট্রিঃ ডিভল্টভাবেই বাংলাদেশ সিলেক্ট করা থাকবে। পরিবর্তন করার কোন প্রয়োজন নেই। না থাকলে বাংলাদেশ সিলেক্ট করে নিতে হবে।
  • মোবাইল নম্বরঃ এমন একটি মোবাইল নম্বর ব্যবহার করতে হবে যেটা সচল এবং পূর্বে কোন টিন সার্টিফিকেট রেজিস্ট্রেশনের কাজে ব্যবহার করা হয় নি এমন একটি মোবাইল নম্বর প্রদান করুন।
  • ইমেইলঃ আপনার ইমেইলটি সঠিকভাবে লিখুন।

সর্বশেষ নিচে থাকা ক্যাপচা কোডটি পুরণ করে রেজিস্টার বাটনে ক্লিক করুন। ক্লিক করার সাথে সাথে আপনাকে অন্য একটি পেজে নিয়ে যাওয়া হবে এবং একটি অ্যাক্টিভেশন কোড চাইবে। রেজিষ্ট্রেশনের সময় আপনি যেই মোবাইল নাস্বারটি ব্যবহার করেছেন সেই নাস্বারেই অ্যাক্টিভেশন কোড পাঠানো হবে। মোবাইলের ম্যাসেজ থেকে কোডটি দেখে টাইপ করে অ্যাক্টিভেশন বাটনে ক্লিক করুন।

এগুলো অবশ্যই পড়বেন—

দ্বিতীয় ধাপ: লগইন এবং ক্যটাগরী নির্বাচন-

সঠিকভাবে রেজিস্ট্রেশন করা হয়ে গেলে ওয়েবসাইটের লগইন বাটনে ক্লিক করে আপনার ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে লগইন করুন। ওয়েলকাম পেজে টিন রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য একটি বাটন দেখতে পাবেন। সেখানে ক্লিক করে রেজিস্ট্রেশনের আবেদন শুরু করুন।

এই ধাপে আপনাকে আপনার পেশা ও অবস্থান সংক্রান্ত কিছু তথ্য দিতে হবে। আপনি কি ধরনের পেশায় আছেন, তাছাড়া আপনি কোন জেলার কোন থানায় অবস্থান করছেন, এসব তথ্য দেওয়ার পর পরবর্তী ধাপে যাওয়ার জন্য নেক্সট বাটনে ক্লিক করুন।

তৃতায় ধাপ: আবেদন ফরম পূরন-

এবার আপনার সামনে মূল আবেদনের পেজটি এসে হাজির হবে। এই নির্ধারিত ফরমটিই আপনাকে পুরণ করতে হবে সঠিক ও নিভুল তথ্য দিয়ে। কোন তথ্য ভুল দিলে সার্টিফিকেট পাবেন না, এমন কি ফরমটিও সাবমিট করতে পারবেন না। ফরমটি পূরণের সময় অবশ্যই আপনার জাতীয় পরিচয় পত্রটি কাছে রাখুন। চলুন ফরম টিতে কি কি তথ্য দিতে হবে তা সংক্ষেপে জেনে নিই-

  • করদাতার নামঃ আপনার নাম জাতীয় পরিচয় পত্রে যেভাবে আছে ঠিক হুবহু একইভাবে লিখুন।
  • লিঙ্গঃ রেডিও বাটন থেকে মেল অথবা ফিমেল নির্বাচন করুন।
  • জাতীয় পরিচয়পত্র নাম্বারঃ আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে সঠিকভাবে নাম্বারটি লিখুন।
  • জন্ম তারিখঃ জাতীয় পরিচয়পত্রে যে জন্ম তারিখ দেওয়া আছে সেটিই নির্বাচন করুন। অন্যথায় সার্টিফিকেট আসবে না।
  • পিতা, মাতা, স্বামী স্ত্রীর নামঃ পরের ৩টি ঘরে পিতার নাম, মাতার নাম ও বিবাহিত হয়ে থাকলে স্বামী/ স্ত্রীর নাম লিখুন। অবিবাহিত হলে ঘরটি ফাঁকা রেখে দিন। বাবা মায়ের নামের বানানের ক্ষেত্রে কোন বাধ্য-বাধকতা নেই, তবে নির্ভুলভাবে লেখার চেষ্টা করুন।
  • বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানাঃ এরপর ফরমের একদম নিচের অংশে আপনার বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা প্রদান করে গো টু নেক্সট বাটনে ক্লিক করুন।

এবার আপনার প্রদানকৃত সকল তথ্য আপনাকে মিলিয়ে দেখার জন্য প্রিভিউ করা হবে। তথ্য নির্ভুল হয়ে থাকলে পেজের নিচের দিকে সকল তথ্য সঠিক হয়েছে মর্মে ইংরেজিতে একটি অঙ্গীকারনামা রয়েছে এবং তার পাশেই একটি ছোট বক্স রয়েছে। বক্সটিতে ক্লিক করে সাবমিট আ্যাপ্লিকেশন বাটনে ক্লিক করুন।

এটি হচ্ছে আবেদনের সর্বশেষ পর্যায়। আপনি সাবমিট আপ্লিকেশনে বাটনে ক্লিক করার পর আপনার দেওয়া সকল তথ্য জাতীয় পরিচয় পত্রের সার্ভারে সংরক্ষিত তথ্যের সাথে মিলিয়ে দেখবে এবং তথ্য সঠিক হলে আপনার জাতীয় পরিচয় পত্রের ছবি সম্বলিত একটি পেজ চলে আসবে যেখানে বলা হবে যে আপনার টিন সার্টিফিকেট (PIN) আ্যাপ্লিকেশন সফল হয়েছে।

Businesses BDhttps://www.businesslinear.com/
Lorem ipsum is a placeholder text commonly used to demonstrate the visual form of a document or a typeface without relying on meaningful content

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest Articles