Wednesday, May 15, 2024

ক্লাউড কিচেন!বাংলাদেশে ক্লাউড কিচেন ব্যবসার ভবিষ্যৎ

বর্তমান  বিশ্বে অনলাইন ফুড অর্ডারিং এবং ডেলিভারি সার্ভিস অন্যতম জনপ্রিয় একটি  সার্ভিস।ডেলিভারি সার্ভিস দিনের পর দিন খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে, কারন ডেলিভারি সার্ভিস এর মাধ্যমেই বাসাই বসে আমরা পছন্দের খাবার উপভোগ করতে পারি। গ্লোবাল বিজনেস data platform Statista একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, বর্তমান বিশ্বে অনলাইন ফুড ডেলিভারি শিল্পের বাজার বৃহৎ আকার ধারন করেছে।যার আকার 2024 সালের মদ্ধে 182 বিলিয়ন ডলারের বেশি হবে। অনলাইন খাদ্য সরবরাহের ক্রমবর্ধমান প্রবণতার মধ্যে বর্তমানে খাদ্য সরবরাহ শিল্পে ক্লাউড কিচেন সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ক্লাউড কিচেন ছাড়াও এই মডেলটি ভূত কিচেন, ডার্ক কিচেন, ভার্চুয়াল রেস্তোরাঁ, স্যাটেলাইট রেস্তোরাঁ এবং আরও বেশ কয়েকটি নামে জনপ্রিয়তা অর্জন করছে। ব্যবসায়ী  বিশেষজ্ঞরা বলছেন ক্লাউড কিচেন হল রেস্টুরেন্ট ব্যবসার ভবিষ্যৎ। এইভাবে এই বাজারকে ঘিরে নতুন ব্যবসায়িক মডেল গড়ে উঠছে এবং বাংলাদেশের সম্পূর্ণ ফুড-টেক ইকোসিস্টেমে বিদেশী বিনিয়োগ আনা হচ্ছে। বর্তমান বিশ্বে ক্লাউড কিচেন ব্যবসা দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে বড় অবদান রাখবে।

ক্লাউড কিচেন কি?

ক্লাউড কিচেন”-বাংলায় অনুবাদ করলে “মেঘের উপর রান্নাঘর”, তবে কি আজ প্রযুক্তির কল্যাণে রান্না হচ্ছে সাত আসমানের উপর? না! আজ চাইলেই রেস্টুরেন্টের খাবার পৌঁছে যাচ্ছে আপনার বাড়িতে, শুধুমাত্র একটি অর্ডারের মাধ্যমে। আর এই জনপ্রিয় ম্যাজিকের নামই ক্লাউড কিচেন। সহজ ভাষায় বললে, ক্লাউড কিচেন এমন এক রেস্টুরেন্ট ব্যবসার মডেল যেখানে বসে খাওয়ার মত জায়গা নেই, রয়েছে শুধু একটি রান্নাঘর। ক্রেতা অনলাইনে খাবার অর্ডার করবেন আর আপনার রান্নাঘর থেকে খাবার পৌঁছে যাবে তাঁর দোরগোড়ায়।বর্তমানের করোনা মহামারীর সময়ে সবচেয়ে বেশী জনপ্রিয়তা লাভ করেছে এবং এই জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েই চলেছে।

এটি মূলত অনলাইনভিত্তিক ডেলিভারী নির্ভর রেস্টুরেন্ট যেখানে ডাইন-ইন করার জন্য কোন স্পেস থাকে না এবং যা বিভিন্ন ফুড ডেলিভারী সার্ভিস, মোবাইল অ্যাপ এবং ওয়েবসাইটের উপর নির্ভরশীল।ক্লাউড কিচেনগুলি যে কোনও জায়গায় তৈরি করা যেতে পারে, কারণ তাদের বিস্তিত জায়গার প্রয়োজন হয় না। আর এই ম্যাজিকের কল্যাণেই বিশাল রেস্টুরেন্ট স্পেসের ভাড়া না দিয়ে, ওয়েটার ছাড়া কেবলমাত্র একটি রান্নাঘর এবং রাধুনী নিয়েই রেস্টুরেন্ট ব্যবসাও দিন দিন বিস্তার লাভ করে যাচ্ছে।

ক্লাউড কিচেনের ইতিহাস:

ক্লাউড-কিচেনের-ইতিহাস
বর্তমান বিশ্বে অনলাইন ফুড অর্ডারিং এবং ডেলিভারি সার্ভিস অন্যতম জনপ্রিয় একটি সার্ভিস।

ক্লাউড কিচেন” নাম টি নতুন শোনালেও এর ব্যবহার বেশ পুরনো। পিজা ডেলিভারি রেস্তোরাঁগুলো যুগ যুগ ধরে একই ধরনের পদ্ধতি অনুসরণ করে ব্যবসা করে আসছে। পিজ্জা টেইকআউট সিস্টেম ১৯৫০ এর দশক থেকে পরিচিত। মূলত ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক সংকটের পর থেকে রেস্টুরেন্ট স্পেসের রেন্ট বাড়ার সাথে সাথে মেগাসিটি গুলোতে ক্লাউড কিচেনের প্রসার ঘটতে থাকে। অর্থনৈতিক মন্দার পর উচ্চমানের দামি রেস্তোরাঁরা তাদের নিয়মিত কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারেনি। এদিকে নিউইয়র্কের মতো শহরে স্থান ভাড়া কয়েকগুণ বেড়েছে। প্রথমত রেস্টুরেন্ট স্পেসের চড়া মূল্য, দ্বিতীয়ত রেস্টুরেন্ট গুলোর সেইফটি রেগুলেশন সার্টিফিকেট মেনে চলতেও অনেক বেগ পেতে হতো রেস্টুরেন্ট মালিকদের। সেই হিসেবে রেস্টুরেন্টগুলোতে কাস্টমার সংখ্যা দিন দিন কমতে থাকে।

ফলস্বরূপ, অনেক রেস্টুরেন্ট তাদের কার্যক্রম স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছিল। সেই সময়ে খাদ্য বিতরণ ট্রাকগুলি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছিল কারণ সেগুলি সেট-আপ করার জন্য বেশ সস্তা ছিল। প্রথমত এটি একটি খাদ্য ট্রাক, ভাড়া করাও বেশ সহজ এবং এটি লাভজনক ছিল। সস্তা হওয়ার পাশাপাশি, এই খাদ্য ট্রাকগুলি একাধিক স্থানে যাতায়াত করতে পারত। এই ব্যবস্থা থেকেই ফুড ডেলিভারি ধারণা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে , যেখানে ফোন কল বা মেসেজের মাধ্যমে অর্ডার গুল সম্পন্ন করা হত। এদিকে, ২০১০ সালে স্মার্টফোন অ্যাপের স্বর্ণযুগ শুরু হওয়ার সাথে সাথে খাদ্য ট্রাকের ধারণাটি পরিবর্তন করা হয় এবং ধীরে ধীরে ক্লাউড কিচেনে রূপ নেয়। রেস্তোরাঁগুলি বড় জায়গা ভাড়া নেয় এবং রান্নাঘর এবং ডাইনিং-রুমের ব্যবস্থা করার পরিবর্তে, তারা কেবল রান্নাঘরের জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা ভাড়া নেয়।

তারপর তারা ফেসবুক এবং টুইটারের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অর্ডার নেয়। ২০১১ সালে, রেবেল ফুডস ভারতে ফ্যাসোস চালু করে, যা উদ্ভাবনী বিপণন কৌশলগুলির মাধ্যমে টুইটার ব্যবহার করে অর্ডার নেওয়া শুরু করে। তারপরে, রেবেল ফুডস অনুসরণ করে, বিশ্বের অনেক দেশে অনলাইন বা অ্যাপ-ভিত্তিক ক্লাউড রান্নাঘরগুলি প্রতিষ্ঠিত হতে শুরু করে। রেবেল ফুডস এর পথ ধরে অনেক দেশে অ্যাপভিত্তিক ক্লাউড কিচেন ব্যবসা শুরু হয়।

ক্লাউড কিচেন কিভাবে কাজ করে?

ক্লাউড-কিচেন-কিভাবে-কাজ-করেক্লাউড কিচেন বেশিরভাগই অনলাইনে খাবারের অর্ডার নেয়। তাই প্রায় সব রান্না ঘরেই ক্লাউড কিচেন (পিওএস) পয়েন্ট অফার সিস্টেম থাকে। বিভিন্ন ফুড গ্রাহক থেকে অর্ডার, অনলাইন অর্ডারিং, অথবা ফোন কল পয়েন্ট অফার সিস্টেম এর সাথে একত্রিত হয়। ফোন কলের মাধ্যমে অর্ডারগুলি কল সেন্টার প্যানেলের মাধ্যমে ডান ব্র্যান্ডে পাঠানো হয়। ভিন্ন ভিন্ন রেস্তোরাঁয় ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের খাবার পাওয়া যায়। তাই খাবারের অর্ডারগুলি প্রায়ই বিভিন্ন রকম হয়, বিভিন্ন স্বাদ এবং প্যাকেজিং সহ। এই ক্ষেত্রে প্রতিটি ব্র্যান্ডের জন্য একটি dedicated chef এবং রান্নাঘর রয়েছে।

কিছু ক্লাউড কিচেন ডিসপ্লে সিস্টেম থাকে ।অর্ডার পাওয়ার সাথে সাথে ডিসপ্লে সিস্টেমের মাধ্যমে সেই অর্ডারের সমস্ত তথ্য দেখা যায়। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের খাবার তৈরিতে নিয়োজিত শেফ এবং অন্যান্য কর্মীরা সহজেই এই তথ্য দেখতে পারেন। খাবার তৈরির পর ডেলিভারির জন্য প্রস্তুত করা হই। ক্লাউড কিচেনের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল রেস্টুরেন্ট স্পেসের দরকার হয় না,-যার ফলে  বড় খরচ বাঁচায়। উপরন্তু, এই ধরনের রান্নাঘরের ক্ষেত্রে, মেনু খুব সহজেই পরিবর্তন করা যায় এবং এটি একটি ওয়েব ভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম হওয়ায় মেনু প্রিন্টিং এর কোন ঝামেলা নেই।

এগুলো অবশ্যই পড়বেন—

ক্লাউড কিচেনের সুবিধা:

  • ক্লাউড কিচেনের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল কোন স্টোরফ্রর্ন্ট দরকার হয় না, তাই বড় ধরণের খরচ বেঁচে যায়।
  • এই ধরনের রেস্টুরেন্টে খাদ্যতালিকা খুব সহজে পরিবর্তন করা যায় এবং খাদ্যতালিকা প্রিন্টিংইয়েরও কোন ঝামেলা নেই।
  • একাধিক ফুড ডেলিভারি সার্ভিসের সাথে সংযোগ থাকায় খুব সহজে ব্যবসা বিস্তার করা সম্ভব হয়।
  • ক্লাউড কিচেন প্রাইম লোকেশনে স্থাপন করারও দরকার পড়ে না, যেকোন যায়গায় ৬০০-৭০০ বর্গফুটের যায়গায় ব্যবসা শুরু করে অনেক বড় কাস্টমার বেইসকে সার্ভ করা সম্ভব।
  • স্টোরফ্রন্ট রেস্টুরেন্টগুলোতে যেমন শেফের পাশাপাশি ওয়েটার, মানেজমেন্ট সহ আরো অনেক লোক দরকার হয়, ক্লাউড কিচেনে সেটা দরকার হয় না। তাই খরচ বেশ কমানো সম্ভব।

 ক্লাউড কিচেনের কিছু অসুবিধাঃ

ক্লাউড কিচেনকে ঠিকভাবে চালাতে এতো এতো সুবিধার পাশাপাশি বেশ কিছু সতর্কতাও অবলম্বন করতে হয় । যেমনঃ

  • প্যাকেজিং ক্লাউড কিচেনের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার। ঠিকঠাক প্যাকেজিং করা না হলে খুব সহজেই কাস্টমার হারাতে হই।
  • ক্লাউড কিচেন সার্ভিস দিতে অনেকক্ষেত্রেই ফুড ডেলিভারির জন্য থার্ড পার্টির উপর নির্ভরশীল থাকতে হয়। তাই ডেলিভারি কোম্পানির সাথে যেকোন কনফ্লিক্ট অনেক সময়ই ঝামেলার সৃষ্টি করে।

বর্তমান বিশ্বে কোভিড-১৯ মহামারীতে ক্লাউড কিচেনগুলো বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।  বাংলাদেশে বেশিরভাগ ক্লাউড কিচেন ই মূলত ইন্ডিপেনডেন্ট ক্লাউড কিচেন। ২০১৯ সালে প্রথম ক্লাউড কিচেন এর যাত্রা শুরু হয় এবং এখন পর্যন্ত তারাডো “অন দ্য গো” “হিরো বার্গার” “ফ্রাইবক্স” দেশীয় নামে চারটি ভিন্ন ব্র্যান্ড নিয়ে এসেছে।  খাবারের মানের পাশাপাশি হাইজিন, টেম্পারেচার রেগুলেশনে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার এবং দ্রুততম ডেলিভারি নিশ্চিত করে দ্রুতই এগিয়ে যাচ্ছে এই স্টার্টআপটি। বাংলাদেশে Live Green ও ক্লাউড কিচেনের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ নাম।                                                                                    

ক্লাউড কিচেনকে রেস্টুরেন্ট ব্যবসার ভবিষ্যত বলা হলেও,আমার মতে এটি আমাদের দেশের ভোজনরসিক জনগোষ্ঠীর জন্য অপার সম্ভবনাময় একটি খাত।তাই যদি আপনার রান্না করতে ভাল লাগে, রান্নার মাধ্যমে নিজেকে পরিচিত করে তুলতে চান, তবে বাজেট এবং ঝুঁকির ভয় পাচ্ছেন-তবে এই ক্লাউড কিচেন কনসেপ্ট পারে আপনার জীবন বদলে দিতে। শুধু একটি রান্নাঘর আর স্মার্টফোন ই পারে আপনার রন্ধনশৈলীকে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে এবং আপনাকে স্বাবলম্বী করে তুলতে।

 

Businesses BDhttps://www.businesslinear.com/
Lorem ipsum is a placeholder text commonly used to demonstrate the visual form of a document or a typeface without relying on meaningful content

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest Articles