ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট :
বর্তমানে সারাবছরই ছোটখাটো কোনো না কোনো অনুষ্ঠান লেগেই থাকে। কর্মব্যন্ত মানুষের হাতে অনুষ্ঠানের যাবতীয় আয়োজন করার সময়টাই বা কোথায়? তাই বলে কি অনুষ্ঠান থেমে থাকবে? না, একদম না। এর জন্যই আজকাল মানুষ ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের (event management) দ্বারপ্রান্তে ছুটছেন। বিয়ে বলুন কিংবা যেকোনো কনসার্ট, মেলা, মিটিং, জন্মদিন, পার্টি, ভ্রমণ কিংবা কনফারেন্সের আয়োজন, সবক্ষেত্রেই এখন মানুষ ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের উপরই বেশি নির্ভর করছেন।
ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট যেমন একটি শৈল্পিক কাজ তেমনি এটি পরিচালনা করাও বেশ চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার। আপনিও কি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট করার চিন্তা করছেন? জানতে চান ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কি? কিভাবে করে! তাহলে এটি আপনার জন্য।
ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কি?
(event management) শব্দ দুটি ইংরেজি ভাষা থেকে এসেছে। এখানে event মানে হলো কোনো অনুষ্ঠান কিংবা ঘটনা। আবার management মানে হলো ব্যবস্থাপনা বা পরিচালনা।
অর্থাৎ ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট বলতে বুঝায় যেকোনো অনুষ্ঠান, ঘটনা কিংবা কোনো আয়োজন সম্পন্ন করার জন্য সার্বিক কাজ পরিচালনা বা তদারকি করা।
চলুন একটা উদাহরণ থেকে সহজে বুঝে নেওয়া যাক। মনে করুন আপনি একটি বিয়ে পরিচালনার দায়িত্বে আছেন। তাহলে বিয়ের সাথে রিলেটেড যে কাজগুলো যেমন; বিয়ের কার্ড ছাপানো, কার্ড বিলি, কমিউনিটি সেন্টার বুকিং, গাড়ি ভাড়া, ছব তোলা ইত্যাদি যাবতীয় কাজের দায়ভার থাকবে ম্যানেজমেন্টের হাতে।
আবার ধরুন একদল লোক কোনো একটি দর্শনীয় স্থানে যাওয়ার জন্য ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের কাছে গেলো। তখন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের কাজ হলো দর্শনীয় জায়গা ঠিক করে দেওয়া, টিকিট বুকিং, যাতায়াতের ব্যবস্থা, থাকার ব্যবস্থা করা৷ মোটকথা ভ্রমণের পুরো দায়িত্বই থাকে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের পরিচালনায়।
বাংলাদেশে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ক্যারিয়ার সম্ভাবনা:
বর্তমানে বাংলাদেশে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের অনেক ক্ষেত্র রয়েছে। আর দিন দিন ক্ষেত্র বৃদ্ধির সাথে সাথে কোম্পানী এবং এই ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট জব এর পরিমাণও বৃদ্ধি পাচ্ছে, যার দরুণ কর্মসংস্থানেরও সুযোগ বাড়ছে। তাই এটা হলফ করে বলা যায়, সূদুর ভবিষ্যতে এই ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট বাংলাদেশের সর্বক্ষেত্রে ছড়িয়ে পরবে।
আরো পড়ুন..
- অনলাইনে ইনকাম 2022, বাংলাদেশে ঘরে বসেই অনলাইনে আয় করার সহজ উপায়।
- ফেসবুকে অনলাইন ব্যবসা শুরু করবেন কিভাবে – (সেরা ৬ উপায়)
- অল্প পুঁজিতে বেশি লাভজনক ব্যবসার আইডিয়া
ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট শুরুটা যেভাবে করবেন:
যারা এই পেশায় আসার জন্য আগ্রহী , ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের উপরে তারা কিন্তু চাইলে শর্টকোর্স করে নিতে পারেন । বাংলাদেশে বর্তমানে এখন অনেকগুলো ছোট বড় প্রতিষ্ঠান রয়েছে , যারা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের উপরে শর্টকোর্সের আয়োজন করে তাদেরকে কাজ শিখাচ্ছে। খুব অল্প টাকার বিনিময়ে আপনারা কোর্স করে নিতে পারেন। ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট পরিচালনায় আয়োজিত যে সমস্ত বড় বড় প্রোগ্রামে উপস্থিত থাকার জন্য সেখানে অবশ্যই চেষ্টা করবেন। অনুষ্ঠানটি উপভোগ করা থেকে আপনারা যে কাজটা কাজগুলোকে ভালোভাবে লক্ষ্য করবেন ৷ দেখতে থাকুন জানুন আর শিখুন । বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পার্ট টাইম চাকরি করতে পারেন । আর এতে করে কিন্তু আপনাদের অভিজ্ঞতা বাড়তে থাকবে।
ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট থেকে আয় করার উপায়গুলোঃ
১.নির্দিষ্ট ক্ষেত্র নির্বাচন করাঃ
একজন ইভেন্ট প্ল্যানার প্রতিদিন বিভিন্ন মানুষের সাথে কাজ করার সুযোগ পেয়ে থাকেন। কমিউনিকেশন স্কিল বা আলাপ গড়ে তোলার যে দক্ষতা – এটিই তাকে পরিপূর্ণ করে তোলে। তবে, একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে যে, সব ধরণের অনুষ্ঠান কিন্তু একরকমভাবে পরিচালনা করা সম্ভব না। ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট এর দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিকে সেই অনুষ্ঠানের ডেকোরেশন বা সাজসজ্জা, খাবার মেন্যু, সঠিক জায়গা, সব ধরণের জিনিসের সুষ্ঠু ব্যবহার ইত্যাদি সব নিখুঁতভাবে বিবেচনা করার ক্ষমতা থাকতে হবে। নয় তো সে কাজে ভাল সফলতা পাবে না। সফলতার পেলেও তার সফলতার পরিমাণ হবে খুবি সামান্য।
প্রত্যেকটি অনুষ্ঠানেই অন্যগুলোর তুলনায় কিছুটা ভিন্নতা থাকবে। যেমন, একটি বিয়ের অনুষ্ঠানের সামগ্রিক বিষয়াবলি যেমন হবে, কোনো বিজনেস বা ব্যবসা সম্পর্কিত অনুষ্ঠান যেমন কোনো কোম্পানির আয়োজন কিন্তু কখনোই একরকম হবে না। কর্মক্ষেত্রের অনুষ্ঠানগুলোতে সবসময়ই প্রাতিষ্ঠানিক এবং মার্জিত ছাপ থাকা আবশ্যক, যেখানে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে থাকে কোমলতা এবং আনন্দের জলছবি। তাই, আপনাকে প্রথমেই বেছে নিতে হবে যে আপনি কোন ধরণের ইভেন্টে বেশি আগ্রহী।
আপনি যে ইভেন্টে বেশি আগ্রহী, সে ধরণের ইভেন্টে আপনাকে দক্ষতা অর্জন করতেই হবে। একজন দক্ষ প্ল্যানার হওয়ার পর হয়ত সব ধরণের আয়োজনই আপনি করতে পারবেন । কিন্তু, প্রথম ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রতে দক্ষতা অর্জন করলে এবং সে অনুযায়ী এগিয়ে গেলে আপনার সাফলতা অত্যন্ত সহায়ক হবে। তবে, এক্ষেত্রে আরও একটু কৌশলী হওয়া আপনার জন্যই লাভজনক হবে। আপনার পছন্দের পাশাপাশি কোন সেক্টরের বাজার দর ভালো চলছে, সেটা যদি যোগ করে ফেলেন, তবে এই সাফল্যেই নতুন মাত্রা যোগ হতে পারে। সেজন্য সব ধরণের ইভেন্ট সম্পর্কে জেনে তারপর এ সিদ্ধান্ত নেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ।
২. সামাজিক মাধ্যমগুলোতে ইভেন্ট প্ল্যানিং এর প্রচারণা বা পরিচিতি গড়ে তুলতে হবেঃ
আপনি কি জানেন প্রায় ৪৮% বিয়ের কনে সামাজিক মাধ্যমগুলোর মাধ্যমে ইভেন্ট প্ল্যানারদের খোঁজ করে থাকেন এবং তার মধ্যে ৩৬% অর্ডারও এভাবেই হয়? সামাজিক মাধ্যমগুলো যেমন ফেসবুক, টুইটার, ইন্সটাগ্রাম, পিনটারেস্ট ইত্যাদিতে আপনি যখন বিভিন্ন আকর্ষণীয় ইভেন্ট প্ল্যানিং এর উদাহরণ এবং আপনার দক্ষাতাগুলো তুলে ধরবেন, তখন তা আরও বেশি কার্যকর হবে আপনার জন্য।
বর্তমান যুগ ডিজিটাল যুগ। তার উপর কোভিড-১৯ এর প্রভাবে এখন বেশিরভাগ কাজই অনলাইনে করতেই আমরা বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে থাকি। তাছাড়াও, ইন্টারনেট ছাড়া সবসময় ইভেন্ট প্ল্যানারদের সাথে যোগাযোগ করাও কঠিন। তাই, সামাজিক ক্ষেত্রে নিজেকে পরিচিত করে তুলুন। বিশেষ করে, ফেসবুকে নিজেকে তুলে ধরুন। প্রতিষ্ঠানের নামে একটি ফেসবুক পেজ খুলুন। জেনে রাখুন. ফেসবুক পেজ খোলার ৮টি লাভ রয়েছে। এটা শুধু যে আপনার কিংবা আপনার প্রতিষ্ঠানের পরিচিতি বাড়াবে, তা-ই নয়; বরং আপনাকে নানা রকম লাভ এনে দেবে। পূর্বে কোনো ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট এর কাজ করে থাকলে আপনার পেজে সেটা হাইলাইট করুন। নিজেকে যোগ্য হিসেবে প্রমাণ করার জন্য সব ধরণের সুবিধার কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ফোকাস করুন। তাহলে, আপনার ইনকামের পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবেন আপনি।
৩. ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট থেকে আয় করতে অনলাইনের পাশাপাশি অফলাইনেও পরিচিতি গড়ে তুলুনঃ
বর্তমানে অনলাইনে যদি আপনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে না পারেন, তাহলে আপনি অনেক কাস্টমারই হারাচ্ছেন, সে বিষয়ে নিশ্চিত থাকুন। তবে, অনলাইনের পাশাপাশি অফলাইনেও আপনার হয়ে উঠতে হবে পরিচিত। বর্তমান যুগে যে পরিমাণে চোর বাটপারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাছে. অনলাইনের উপর থেকে অনেকেরই এতে বিশ্বাস উঠে যাচ্ছে। তাই, আপনার গ্রাহকদের সাথে সবসময়ই সুসম্পর্ক রাখুন, যেনো তারা তাদের পরিচিতদের সবসময় আপনার সম্পর্কেই জানায়।
বিভিন্ন ধরণের সার্ভিস অফারকারীদের প্রতি সকলেরই বিশেষ নজর থাকে। সেই নজরটা কাড়তে পারলেই আপনি অনেক দূর এগোতে পারবেন। একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে যে ৫২% বিয়েতে কনে আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকে যে ইভেন্ট প্ল্যানার সম্পর্কে জানতে পারেন, তাকেই হায়ার করে থাকেন। অর্থাৎ, অনুষ্ঠানটির প্ল্যানিং তাকেই দিয়ে থাকেন। ৭৪% মানুষ তার আত্মীয় স্বজন কিংবা বন্ধু বান্ধবের মুখের কথার প্রেক্ষিতেই ইভেন্ট প্ল্যানারের সাথে যোগাযোগ করে থাকেন।
তাই, আপনি যদি আপনার কাস্টমারদের জন্য বিশেষ কোনো ব্যবস্থা রাখতে পারেন, তবে তা পরবর্তীতে আপনার জন্যই লাভজনক হবে। আর তার পাশাপাশি আপনার পরিচিত যারা আছেন, তাদের সাথেও যোগাযোগ রাখবেন যেনো তারা তাদের পরিচিতদের আপনার সম্পর্কে অবহিত করে।
এগুলো অবশ্যই পড়বেন—
- ইউটিউব থেকেই প্রতি মাসে লাখ টাকা আয় কিভাবে করবো?
- গ্রামে লাভজনক ১০ টি ব্যবসার আইডিয়া ২০২২।
- বাংলাদেশে ব্লকচেইন প্রযুক্তির ভবিষ্যত সম্ভাবনা।
৪.ইভেন্ট প্ল্যানিং এ কাস্টমারের চাহিদার প্রতি গুরুত্ব দেওয়াঃ
একটি ইভেন্ট প্ল্যানিং এ আপনাদের বিভিন্ন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে। সব ক্ষেত্রে আপনি সমান লাভ করতে পারবেন, এমন নয়। ধরুন, আপনি ৫টি ইভেন্ট যদি পরিচালনা করে থাকেন, তবে তা হবে ৫ রকমের। আর, সেক্ষেত্রে আপনাকে সচেতন হতে হবে।
আপনি কোনো ধরণের ইভেন্ট নিয়ে কাজ করেন, সেটা প্রথমেই আপনার পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করতে হবে। আর সে অনুযায়ী আপনার টার্গেট কাস্টমার থাকবে। বিভিন্ন রিসার্চের মাধ্যমে আপনাকেই বুঝে নিতে হবে যে আপনার টার্গেট কাস্টমার কে। আর সেই অনুযায়ী আপনার কর্মকান্ড পরিচালনা করতে হবে। তাহলে, বিষয়টি ব্যক্তিগতভাবে আপনি খুব সুন্দরভাবে পরিচালনা করতে পারবেন। এতে আপনার জন্য কাজ পাওয়াও সুবিধাজনক হবে।
আমাদের শেষকথাঃ
যদি আপনি আজকের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ে থাকেন। তাহলে আশা করা যায় আপনি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সম্পর্কে একটা পরিস্কার ধারনা পেয়ে গেছেন।