অল্প পুঁজিতে ব্যবসা করা যায়। শুনতে যদিও কিছুটা অন্যরকম লাগছে। কিন্তু, অল্প পুঁজিতে ব্যবসা করে বর্তমানে অনেকেই কোটিপতি হয়ে গিয়েছেন। প্রত্যেকটা মানুষেরি কিছু স্বপ্ন থাকে। কেউ স্বপ্ন দাখেন সরকারি চাকরি করবে। আবার কেউ বা চাই জীবনে একজন সফল ব্যবসায়ী হবে।
কিন্তু, প্রয়োজনীয় মূলধনের অভাবে অনেকেই সেই স্বপ্ন পূরণ করতে পারেন না। যে কোন একটা ব্যবসা করতে গেলে অনেক মূলধনের প্রয়োজন হয়। এ ধারণাটা আমাদের সবার মনের মধ্যে আছে। তাই, অনেক সময় স্বপ্ন দেখে ও দেখা হয় না। হয় না সেই স্বপ্ন পূরণের পথে হাটা। তবে, ব্যবসা করতে যে অনেক অনেক টাকার প্রয়োজন এই ধারণাটি ভুল। তবে, বর্তমান বাংলাদেশের বেস্ট লাভজনক ব্যবসার আইডিয়া গুলা পেতে হলে এখানে ক্লিক করুন।
আমরা আজকে সে বিষয়টি নিয়েই আলোচনা করব। কিভাবে খুব অল্প পুঁজিতে ব্যবসা শুরু করা যায়। পরিশ্রম ও অধ্যবসায় দ্বারা সেই ব্যবসায় সফলতা আসে। আমরা আজকে আলোচনা করব কোন কোন ব্যবসা গুলো কম পুঁজিতে শুরু করা যায়। চলুন তাহলে দেখে নিই।
১.ক্যাফে/কফিশপ (Café or Coffee Shop)
ক্যাফে বা কফিশপের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। কফি একটি জনপ্রিয় পানীয়। আমরা কমবেশি সবাই কফি পছন্দ করে থাকি। আমরা যখন কারও সাথে কোথাও দেখা করার কথা ভাবি ঠিক তখনি প্রথমেই আমাদের একটা কফি শপ এর কথা মনে পড়ে। কফি খেতে খেতে অনেকক্ষণ গল্প চলে। কফি শপ এখন আড্ডা দেওয়ার জন্য খুবই পছন্দের একটি জায়গা।
এছাড়া কফি পান করলে শরীরের ক্লান্তি ও দূর হয় তাই কর্মজীবী মানুষরাও কফি খুব পছন্দ করে থাকেন। বাংলাদেশের মতো একটু উন্নয়নশীল ও জনবহুল দেশে একটি ভালো জায়গায় একটি ভালো কফি শপ করার আইডিয়া অনেক চমৎকার। কফি শপ অল্প টাকায় ব্যবসা করার জন্য আদর্শ ব্যবসা।
সঠিক কৌশল আর পরিকল্পনা নিয়ে চলতে পারলে এটি বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসার একটি। অল্প টাকায় ব্যবসা শুরু সম্ভব।
কফি শপ ব্যবসা করতে যা যা প্রয়োজন:
- একটি কফি মেকার মেশিন।
- কফির কাপ, ওয়ান টাইম গ্লাস হতে পারে।
- কফি বানানোর কাঁচামাল, যেমন: কফি, চিনি, দুধ, বরফ ইত্যাদি
- দোকান বা আপনার ভ্রামমান শপের কিছুটা ডেকোরেশন করতে হবে।
২. চায়ের দোকান ব্যবসা:
চা একটি জনপ্রিয় পানীয়। অনেকেই কফি পছন্দ করেন না। কিন্তু চা পান করেন না এমন মানুষ খুজে পাওয়া মুশকিল। বাংলাদেশের মতো একটি জনবহুল দেশে গলিতে গলিতে চায়ের দোকান দেখা যায়।
কারণ, এদেশের মানুষ চা খুব পছন্দ করেন। কফি শপে অনেক সময় চার্জ বেশি থাকে বলে সবাই যেতে পারে না। সেদিক থেকে চায়ের দোকান খুবই পছন্দ সইও রিল্যাক্সের একটি জায়গা। সঠিক স্থান বাছাই করতে পারলে এই ব্যাবসাটি হবে অল্প পুঁজিতে অনেক লাভজনক একটি ব্যবসা।
আরও পড়ুন:
- বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য ১০ টি সেরা ব্যবসার ধারণা
- বর্তমান বাংলাদেশের বেস্ট লাভজনক ব্যবসার আইডিয়া
৩.গুগল আ্যাডসেন্স:
গুগল এডসেন্স হলো গুগলের একটি অ্যাডভার্টাইজমেন্ট পাবলিশিং প্রোগ্রাম। ধরুন, আপনার যদি একটি ওয়েবসাইট বা ইউটিউব চ্যানেল থাকে তাহলে আপনি গুগল এডসেন্সের মাধ্যমে গুগল এড দেখে টাকা ইনকাম করতে পারবেন। আপনারা ইউটিউবের ভিডিওতে বা ব্লগে বিভিন্ন রকমের অ্যাড দেখতে পান এই অ্যাডগুলো কিন্তু গুগল এডসেন্সের মাধ্যমে দেওয়া হয়। ওই অ্যাড এ যদি ক্লিক পড়ে তাহলে ওদের একাউন্টে টাকা জমা হয়। কিছু টাকা গুগোল কেটে নেয় কিছু টাকা যেখানে অ্যাড দেখায় তাদের কে দেয়। অর্থাৎ বলতে পারেন গুগল এডসেন্স হলো গুগলের একটি সার্ভিস।
আযাডভার্টাইজারদের কাছ থেকে গুগল পার ক্লিক ও পার ইমপ্রেশনের উপর ভিত্তি করে চার্জ নিয়ে থাকে। আর এই চার্জ থেকে যে আর্নিং আসে গুগল তার ২২ পার্সেন্ট থেকে ৩২ পার্সেন্ট পর্যন্ত দেয়। বাকীটা পাবলিশার বা ওয়েবসাইট ওনারদের মধ্যে ভাগ করে দেয়। এতে করে, গুগলের প্রতি বছরের আয় দাঁড়ায় প্রায় ১৩. ৬ বিলিয়ন ডলার।
বর্তমানে আপনি এডসেন্স এর মাধ্যম অনলাইন থেকে টাকা আয় করতে পারবেন। কিন্তু, তার জন্য আগে আপনার একটি ব্লগ, ওয়েবসাইট, App বা Youtube চ্যানেল থাকতে হবে। এই মাধ্যম গুলি ব্যবহার করে আপনি এডসেন্সের জন্য Apply করতে পারবেন। এবং এডসেন্সের বিজ্ঞাপন দেখিয়ে টাকা আয় করতে পারবেন৷
আরও পড়ুন:
৪. ক্যাটারিং:
আরেকটি অন্যতম বেশি লাভের ব্যবসা হল ক্যাটারিংয়ের ব্যবসা। বিয়েবাড়ি থেকে অফিসের বার্ষিক সম্মেলন সব জায়গায় ক্যাটারিংয়ের চাহিদা সর্বত্র। বড় শহর হোক বা মফস্বল, উত্সবে অনুষ্ঠানে যেকোনও জায়গাতেই ডাক পড়ে ক্যাটারারদের।
অল্প টাকায় ব্যবসা শুরু করতে হলে এই ব্যবসার কথা ভেবে দেখতে পারেন। ব্যবসা শুরু করতে প্রথমেই প্রয়োজন একটা নির্ভরযোগ্য টিম। সন্তোষজনক পরিষেবাই এই ব্যবসার মূল, তাই আপনার টিম হতে হবে পরিশ্রমী, হাসিখুশি ও নির্ভরযোগ্য। এছাড়া কিনতে হবে প্রয়োজনীয় বাসনপত্র, গ্যাস উনুন ইত্যাদি
বর্তমানে অনেক ক্ষেত্রেই বিভিন্ন অনুষ্ঠানের দায়িত্বে থাকে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি। তাই এক বা একাধিক ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হলে বাড়তে পারে ব্যবসা।
৫.অনলাইন ফুল ও চকলেট সেবা:
ফুল ও চকলেট সবাই পছন্দ করেন। তাছাড়া কাউকে গিফট দেয়ার জন্য এই দুটি হলো সবচেয়ে উত্তম বন্তু। বিশেষ বিশেষ দিনে এই ধরনের গিফট সবাই পছন্দ করে থাকে। তাই বিভিন্ন আকর্ষণীয় বক্সবা ফ্লাওয়ার বুকে বা ফুলের ঝুড়ি তৈরি করে খুব সহজেই মানুষের কাছে তা পৌছে দেয়া যায়।
কর্মব্যস্ত এই দিনে এখন বাইরে গিয়ে পছন্দের জিনিসটি কিনে আনার সময় অনেকে পায়না সেক্ষেত্রে অনলাইনে এই সেবাটি অনেকেই গ্রহণ করে থাকেন। এতে নিজের সময় ও বাটে আর প্রিয়জন ও খুশি থাকে।
৬.ফাস্ট ফুড ব্যবসা:
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল ও জনবহুল একটি দেশে ফাস্ট ফুড হতে পারে আরেকটি লাভজনক ব্যবসা। আজকাল লোকেরা বাইরে টেস্টি বা স্বাদের খাবার খেতে অনেক ভালবাসে। তাই, ফাস্ট ফুড এর ব্যবসা আজকাল অনেকটাই লাভজনক এবং কম পুঁজি দিয়ে আপনি আরম্ভ করতে পারেন। নিজের দোকানে আপনি অনেক রকমের মোমো, চাওমিনে, চপ, পাও ভাজি, ধোসা, ঘুগনি, কফি আদি খাবার লোকেদের খায়িয়ে টাকা আয় করতে পারবেন।
৭. পোশাক বিক্রি ব্যবসা আইডিয়া:
পোশাক বিক্রি হতে পারে অল্প টাকায় আরেকটি লাভজনক ব্যবসা। বর্তমানে ঘরে বসেই অনেকে বিভিন্ন ধরণের শাড়ি ,পাঞ্জাবি, থ্রি-পিছ বিক্রি করে থাকেন। এতে সুবিধা হলো এক সাথে সব জিনিস ঘরে বসেই পাওয়া যায়।
এর মধ্যে যদি কিছু পোশাক কাস্টমাইজ করা যায় তাহলে এর চাহিদা আরো বৃদ্ধি পায়। এখন অনেকে পরিবারের সবার এক ধরনের পোশাক চান যেটা অনেক সময় বাজারের বিভিন্ন শপিং মল ঘুরে ও পাওয়া যায়না । সেক্ষেত্রে এই ম্যাচিং পোশাক এর কাজটি যদি রাখা যায় নিজের ব্যবসায় তাহলে ভালো লাভ করা সম্ভব। আর এই কাজটি বাসায় বসে করা যায় বলে পুঁজি ও কম লাগে।
৮. মৎস্য চাষ অল্প টাকায় ব্যবসা:
বাঙ্গালিরা মাছ খুব পছন্দ করে থাকে। তাই মৎস্য চাষ হলো কম পুজিতে শুরু করতে পারা আরেকটি ভাল ব্যবসা। বাড়িতে যদি নিজের একটি পুকুর থাকে তাহলে সেখানে খুব কম টাকায় এই ব্যবসাটি শুরু করা যায়। অনেক তরুণ এখন এই ব্যবসা করে একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত হয়েছে।
ভাবতে পারেন, এটা অল্প টাকায় ব্যবসা হয় কেমনে? আসলে, আপনি যদি ছোট পরিসরে শুরু করেন তাহলে, খুব কম টাকায় শুরু করতে পারবেন। পড়ে, দেখুন ১৫০ টাকায় মাছ চাষ শুরু করে কিভাবে কোটিপতি হয়েছে।
৯. গৃহশিক্ষক ও কোচিং সেন্টার:
শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে প্রায় প্রত্যেকেরই গৃহশিক্ষকের প্রয়োজন পড়ে। কোনও বিনিয়োগ ছাড়া আয় করা সম্ভব এই ব্যবসায়। ওয়েবসাইটের মাধ্যমে গৃহশিক্ষক আর ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যে যোগাযোগ ঘটিয়ে দিয়ে করতে পারেন আয়।
গৃহশিক্ষকরা আপনার ওয়েবসাইটে নাম নথিভুক্ত করবেন নিজেদের বিষয়, দক্ষতা আর শিক্ষাগত যোগ্যতা সহ। ছাত্রছাত্রী আর তাদের অভিভাবকরা জানাবেন তাদের চাহিদা। আর এই দুইয়ের মধ্যে সেতুবন্ধনের কাজ করবে আপনার সংস্থা।
এছাড়াও ঘর ভাড়া করে খুলে ফেলতে পারেন কোচিং সেন্টার। উপযুক্ত ও দক্ষ শিক্ষক নিয়োগ করলে ছাত্রছাত্রী আসবে সাধারণভাবেই।
১০. ইউটিউব চ্যানেল খুলুন:
অনলাইনে ব্যবসার আরও একটি সহজ উপায় হল ইউটিউব চ্যানেল, বিষয় হতে পারে যা খুশি। রান্না শেখানো থেকে বেড়ানো, গান থেকে দৈনন্দিনের টোটকা আপনার আগ্রহের যে কোনও বিষয় নিয়েই ইউটিউব চ্যানেল খুলতে পারেন আপনি। ইউটিউব থেকেই প্রতি মাসে লাখ টাকা আয় করতে পারবেন খুব সহজেই।
যদি যথেষ্ট সংখ্যক দর্শক আপনার চ্যানেল বা আপলোড করা ভিডিওগুলো দেখে তাহলে বিজ্ঞাপন বাবদ টাকা পাবেন আপনি। তবে ভিডিওর ভিয়্যু সংখ্য বাড়াতে আপনাকে হতে হবে নিয়মিত ও অভিনব। যাতে অন্যান্য চ্যানেল বাদ দিয়ে আপনার চ্যানেল দেখে দর্শক। ভিডিওর গুণমানের দিকেও বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন।
আরও পড়ুন:
১১. ব্লগ লেখা:
ঘরে বসে ব্যবসা করার অন্যমত সহজ উপায় ব্লগ লেখা। গত এক দশকে পৃথিবীজুড়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছে এই ব্যবসা। এই ব্যবসার জন্য প্রথমেই বেছে নিতে হবে আপনার পছন্দের বিষয়টি। এমন বিষয় বাছুন যা সময়ের সাথে সাথে অচল হয়ে যাবে না। বিষয়টি সম্পর্কে অবশ্যই আপনার জ্ঞান ও আগ্রহ থাকা প্রয়োজন, না হলে বেশিদিন চালিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবেনা।
বাংলাদেশে বেশ কয়েকজন সফল ব্লগার আছেন। আপনার যদি ইংরেজিতে বা বাংলায় লেখার অভিজ্ঞতা থাকে তবে একটি ব্লগ শুরু করুন, এটা আপনার জন্য সেরা আইডিয়া। আপনি একজন ব্লগার হওয়ায় বাড়িতে বসেই ভাল পরিমান ইনকাম করতে পারবেন।
আমার শেষ কথা…
এই ছিল আজকে অল্প পুঁজিতে বেশি লাভজনক ব্যবসার আইডিয়া নিয়ে লেখা। আশা করি আইডিয়াগুলো আপনার ব্যবসায়ে প্রয়োগ করতে পারবেন। আপনাদের যদি কোন রকম প্রশ্ন থাকে তাহলে কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন।