Wednesday, November 20, 2024

ট্রেড লাইসেন্স কি? বাংলাদেশে ট্রেড লাইসেন্স কিভাবে পাবেন?

ট্রেড লাইসেন্স কিঃ

Trade শব্দের অর্থ ব্যবসা এবং License শব্দের অর্থ অনুমতি; অথাৎ, ব্যবসা করার জন্য যে অনুমতি পত্রের মাধ্যমে দেওয়া হয়, তাকে Trade License paper বলা হয়।

বাংলাদেশের প্রতিটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য ট্রেড লাইসেন্স খুবিই গুরুত্বপূর্ণ।। বৈধভাবে যে কোনো ব্যবসা পরিচালনার জন্য প্রয়োজন হয় ট্রেড লাইসেন্স। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য ট্রেড লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বাংলাদেশে ট্রেড লাইসেন্স বা বিজনেস লাইসেন্স এমন একটি দলিল যা প্রমাণ করে আপনি ব্যবসা করার অনুমতি পেয়েছেন। অতএব, এটিকে বাংলাদেশে বিজনেস পারমিট বা বিজনেস লাইসেন্সও বলা যেতে পারে। এটি সংশ্লিষ্ট এলাকার স্থানীয় সরকার দ্বারা জারি করা হয়। আপনার ব্যবসার জন্য উপযুক্ত এবং সঠিক ট্রেড লাইসেন্স পাওয়ার জন্য, ব্যবসার অবস্থানের উপর নির্ভর করে সঠিক ভাবে  আবেদন ফর্মটি পুরন করতে হবে। ট্রেড লাইসেন্স নিতে সঠিক ভাবে  আবেদন ফর্ম পুরন করা খুবি গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশে ট্রেড লাইসেন্স কিভাবে পেতে হয় তার আইনি ভিত্তি পাওয়া যায় স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন 2009 এবং পৌর ট্যাক্সেশন বিধিমালা, 16 তে। বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট সিটি কর্পোরেশন অফিস বা সংশ্লিষ্ট জেলার সিটি কাউন্সিল অফিস থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিতে পারবেন।

ট্রেড লাইসেন্স কেন করবেন?

অনেক ব্যাংক ছোট-খাটো উদ্যোক্তা এবং বড় বড় ব্যবসায়ীদেরকে বিভিন্ন ভাবে আর্থ লোন প্রদান করে থাকেন। ধরুন আপনি আপনার ব্যবসাকে আরো বড় করতে চাচ্ছেন এবং আপনার টাকার দরকার কিন্তু আপনি যখন ব্যাংকের কাছে আপনার ব্যবসার জন্য লোন চাইতে গেলেন তখন তারা ট্রেড লাইসেন্স চাইল।ট্রেড লাইসেন্স দেখার মূল কারণ হলো ব্যাংক দেখতে চাচ্ছে আপনার আসলে কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে কিনা বা থাকলেও সেটা বৈধ কিনা। কেননা ব্যাংক কখনো অবৈধ কাজের জন্য কোন প্রকার অর্থ প্রদান করেন না। 

আপনার যদি ট্রেড লাইসেন্স না থাকে তাহলে ব্যাংকের অর্থ লোন পাবেন না, এছাড়াও নানা রকম আইনি ঝামেলা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য অবশ্যই আপনার ব্যবসার একটি ট্রেড লাইসেন্স করে নিতে হবে। লাইসেন্স থাকলে আপনি আরো অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি সুযোগ সুবিধা আপনার ব্যবসার জন্য খুব সহজেয় পেয়ে যাবেন৷

এই মাধ্যম টি নতুন ব্যবসায়ের সুযোগ তৈরি করে ৷ একজন লাইসেন্সকারী ব্যবসায়ী এই ধরণের ব্যবস্থা থেকে উপকৃত হতে পারেন। কারণ নতুন ব্যবসা শুরু করার জন্য তাদের কাছ থেকে কম আর্থের মাধ্যমে লাইসেন্স প্রদান করা হয়। তারা সহজেয় সরাসরি লাইসেন্স কিনতে পারে, তারপরেই বৈধ ভাবে ব্যবসা করা শুরু করতে পারে। তবে  লাইসেন্সের জন্য সামান্য ফি লাগে৷

ট্রেড লাইসেন্স করে লাভ কি?

ট্রেড লাইসেন্স এর মাধমে বিদেশী বাজারগুলিতে খুব সহজে প্রবেশের ব্যবস্থা করা যায়। বিশেষ করে যখন বিদেশে কোন ফরেনার কান্ট্রির সাথে ব্যবসা  পরিচালনা করতে যাবেন তখন অবশ্যই আপনাকে ট্রেড লাইসেন্স দেখাতে হবে অন্যথায় বিদেশি বাজার থেকে আপনি বঞ্চিত হবেন।

এই পদ্ধতিতে বিদেশী বাজারে প্রবেশ করা অনেক সহজ হয়। এটি স্ব-কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে৷ লাইসেন্সিং মানুষকে ব্যবসা করতে উৎসাহী করে স্ব-কর্মসংস্থানের সমস্ত সুবিধা যেমন তাদের নিজস্ব সময় নির্ধারণের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে সাহায্য করে।লাইসেন্সধারীর দৃষ্টিকোণ থেকে নির্দিষ্ট অঞ্চলে কোনও পণ্য বা পরিষেবার উপর একচেটিয়া বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে যা স্বল্প বিনিয়োগের হারে হয়ে থাকে। এটি একটি অনন্য বিপণন পদ্ধতির বিকাশের স্বাধীনতা সরবরাহ করে থাকে৷একজন লাইসেন্সধারী তাদের বাজার গড় লাইসেন্সারের চেয়ে অনেক বেশি ভাল জানেন। সেই জ্ঞানটি এমনভাবে বাজারজাত করতে দেয় যা গড় গ্রাহকের কাছে আরও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে।

ট্রেড লাইসেন্স করতে কত টাকা লাগে?

ট্রেড লাইসেন্স এর খরচ ব্যবসার উপরে নির্ভর করে। ট্রেড লাইসেন্স মূলত আপনার ব্যবসার ধরনের ওপর নির্ভর করে ফি ধরা হয়ে থাকে। তবে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এর অধীনে ৫শ টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত রেট আছে৷

আপনার যদি লিমিটেড কম্পানি হয়ে থাকে এবং আপনার  টাকার পরিমাণ যদি ১ লাখের মত হয় তাহলে আপনাকে প্রতিবছর ১৫০০ টাকা ফি দিতে হবে। আর যদি ১ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকার ব্যবস্যা হয়ে থাকে তাহলে ২০০০ টাকা প্রদান করতে হবে৷

ই-কমার্সের যেহেতু কোনো ক্যাটাগরি নেই তাই সফটওয়ার, আইটি বা জেনারেল সাপ্লায়ার হিসেবে লাইসেন্স নিতে হয়। সেজন্য সরকারী ফিস ৮৫০ থেকে ১৭০০ কিন্তু আপনার খরচ পড়বে ৪ হাজার। আর কোন ফার্মের সাহায্য নিলে খরচ পড়বে ৫ হাজার। 

সাধারণত, একটি লাইসেন্স পেতে তিন থেকে সাত দিন সময় লাগতে পারে।

এগুলো অবশ্যই পড়বেন—

কোথায় ট্রেড লাইসেন্স করতে হয়?

সিটি কর্পোরেশন এই প্রক্রিয়াটি পরিচালনা করে থাকেন। তাছাড়াও ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলা কিংবা জেলা পরিষদ এই লাইসেন্স প্রদান করে থাকেন।ঢাকা শহরের জন্য, ঢাকা সিটি কর্পোরেশন (উত্তর ও দক্ষিণ) এই সেবা প্রদানের জন্য সিটি কর্পোরেশনকে কতগুলো অঞ্চলে বিভক্ত করেছেন। এর মধ্যে উত্তর সিটি কর্পোরেশনের পাঁচটি এবং দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পাঁচটি অঞ্চল রয়েছে। আপনার প্রতিষ্ঠানটি যে অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত, সেই অঞ্চলের অফিস থেকেই লাইসেন্স সংগ্রহ করতে হবে।আবেদনের ওপর নির্ভর করে কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে তদন্ত করতে এবং এর প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে নির্দিষ্ট পরিমাণ লাইসেন্স ফি পরিশোধের মাধ্যমে লাইসেন্স দিয়ে থাকেন।

কিভাবে ট্রেড লাইসেন্স করবেন?

অনেকে ভাবেন ট্রেড লাইসেন্স করা খুব কঠিন এবং অনেক সময় সাপেক্ষ। তবে আপনার ব্যবসার জন্য খুব সহজে এবং কম সময়ে আপনি লাইসেন্স করতে পারবেন৷ বর্তমানে ই-ট্রেড লাইসেন্স হয়ে কাজ অনেক সহজ হয়েছে। আপনি সরাসরি ইউনিয়ন পরিষদ অফিস, সিটিকর্পোরেশন অথবা পৌরসভায় গিয়ে ট্রেড লাইসেন্স বানাতে পারেন।তবে আজকাল অনেক কনসালটেন্সি ফার্ম আছে যারা নির্দিষ্ট সার্ভিস চার্জ এর বিনিময়ে এসবকাজ করে দিয়ে থাকেন। নিজে ঝামেলা পোহাতে না চাইলে কোনো ফার্মের সাহায্য নিতে পারেন৷

ট্রেড লাইসেন্স করতে কি কি লাগে?

বাংলাদেশে সর্বনিম্ন ১৮ বছর বয়সের যেকোনো নাগরিক ট্রেড লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

ট্রেড লাইসেন্স মূলত দুই ধরণেরঃ

১। নতুন ট্রেড লাইসেন্স

২। ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন

ট্রেড লাইসেন্স করতে বিভিন্ন রকম কাগজপত্র লেগে থাকে৷ যদি আপনার সব কাগজপত্র না থাকে তবে আপনার সেগুলো জোগার করতে হবে। তবেই আপনি ভালো ভাবে ট্রেড লাইসেন্স করতে পারবেন। সকল কাগজপত্র সত্যায়িত করে দিবেন এবং অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে কোন কাগজপত্র যেন ভুল না হই।

তাহলে আসুন দেখি ট্রেড লাইসেন্স করতে প্রয়োজনীয় কি লাগেঃ

  • আবেদনপত্র
  • উদ্যোক্তার জাতীয় আইডি কার্ড
  • হোল্ডিং ট্যাক্স পেমেন্ট রসিদ
  • উদ্যোক্তার সাম্পতিক পাসপোর্ট সাইজের ছবি
  • সিটি কর্পোরেশন এবং পৌর কর্পোরেশনের বিধিবিধান মেনে চলতে অ-বিচারিকস্ট্যাম্পের ঘোষণা
  • স্মারকলিপি এবং সমিতির নিবন্ধগুলির একটি প্রত্যয়িত কপি
  • অন্তর্ভুক্তির শংসাপত্রের একটি অনুলিপি
  • অংশীদারিত্বের চুক্তি
  • কর শনাক্তকরণ নম্বর শংসাপত্র
  • নিবন্ধিত অফিসের ইজারা চুক্তির একটি অনুলিপি
  • বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ওয়ার্ক পারমিট
  • ব্যাংক সলভে্সি বিবৃতি

আরো পড়ুন..

ট্রেড লাইসেন্সের নবায়নযোগ্যঃ

বর্তমানে নবায়ন প্রক্রিয়া তুলনামূলকভাবে অনেক সহজ এবং কোনও তদন্তের প্রয়োজন হয় না। তবে ট্রেড লাইসেন্স নবায়নের জন্য অবশ্যই ট্রেড লাইসেন্স অফিস ডিএনসিসি তে যেতে হবে।

  •  আপনার ট্রেড লাইসেন্স আবেদন ফর্মটি ঢাকা সিটি কর্পোরেশন থেকে সংগ্রহ করতে হবে৷
  • আপনি যদি বিদেশি হন তবে অবশ্যই আপনার পাসপোর্টের একটি কপি দরকার হবে।
  •  মালিকানার প্রমাণাদি এবং কর প্রদানের প্রাপ্তি
  • ৩কপি পাসপোর্ট আকারের ছবি প্রস্থ -৪৫ মিমি, উচ্চতা -৫৫ মিমি)
  • আদালতের বিবৃতি,সিটি কর্পোরেশনের বিধি ও বিধি মেনে চলার জন্য মুদ্রণ।
  • আ্যাসোসিয়েশন (এওএ) এবং মেমোরেন্ডাম আ্যাসোসিয়েশন (এমওএ) এর নিবন্ধসমূহ
  • সংস্থার শংসাপত্র
  • অংশীদারিত্রের দুক্তিপত্র
  • বাংলাদেশের বিনিয়োগ বোর্ডের ওয়ার্ক পারমিট শংসাপত্র বা নথি বিবৃতি
  • ব্যাংক সলভেন্সি অর্থাত্‌ বিবৃতি
  • টিআইএন শংসাপত্র

আধুনিক যুগে উন্নত ব্যবস্থায় করতে পারেন ই-ট্রেড লাইসেন্স,যার ফলে আপনাকে ব্যবসা বা বিভিন্ন কাজ রেখে দৌড়াতে হবে না বারবার৷ ঘরে বা অফিসে বসেই করতে পারেন ই-ট্রেড লাইসেন্স।

আমার শেষ কথা…

এই ছিল আজকে ট্রেড লাইসেন্স কি? বাংলাদেশে ট্রেড লাইসেন্স কিভাবে পাবেন? নিয়ে লেখা। আশা করি আপনাদের ভাল লেগেছে। আপনাদের যদি কোন রকম প্রশ্ন থাকে তাহলে কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন।

Businesses BD
Businesses BDhttps://www.businesslinear.com/
Lorem ipsum is a placeholder text commonly used to demonstrate the visual form of a document or a typeface without relying on meaningful content

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest Articles