Thursday, December 5, 2024

তাহলে কি পৃথিবীর শেষ দিন ঘনিয়ে আসছে?

উষ্ণতার কারণে আমাদের পৃথিবী প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। কয়েক দশক ধরে বন উজাড় হওয়ার কারণে পরিবেশের ক্ষতি এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে, পৃথিবীর পরিবেশ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা প্রায় অসম্ভব। গাছ দিয়ে ঢেকে থাকা পৃথিবী এখন গাছের অভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের কড়াল গ্রাসে ধরা দিয়েছে। গাছ কাটাই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মূল এবং প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গাছ কমতে থাকায় দিনদিন জলবায়ু আরো বিপর্যয়ের মুখে চলে যাচ্ছে।

পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল এ প্রতি বছর যে পরিমাণ কার্বন ডাই অক্সাইড আছে তার দুই তৃতীয়াংশ চুষে নেয় গাছ। পৃথিবীর চার পাশের বন কমতে থাকাই পৃথিবীর প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যাচ্ছে। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী ১৯৯০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ১০০ কোটি একর বন উজাড় হয়ে গাছে। যে পরিমান বন উজাড় হয়ে গাছে তার পুরটার আকার হবে লিবিয়ার সমান। ২০১৫ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বছরে ১ কোটি হেক্তর বন উজার হয়েছে। কিন্তু যে পরিমানে গাছ কাটা হচ্ছে সে পরিমানে কি লাগান হচ্ছে ?

জলবায়ু পরিবর্তন ও পরমাণু যুদ্ধের ভয়াবহতার কারণে মানবসভ্যতা আজ হুমকির মুখে। এসব কারণে পৃথিবী ‘ধ্বংসের দিনও’ ঘনিয়ে আসছে। নোবেল বিজয়ী একদল বিজ্ঞানীগন এই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁরা মহাপ্রলয়ের ঘড়ি বা ডুমস ডে ক্লককে ‘ধ্বংসের সময়’ মধ্যরাতের দিকে আরো দুই মিনিট এগিয়ে দিয়েছেন। সুতারং বলা যায় পৃথিবী ধ্বংসের জন্য বাকি আর মাত্র তিন মিনিট! ডুমস ডে ক্লক’ হলো একটি প্রতীকী ঘড়ি। বিশ্বজুড়ে পরমাণু অস্ত্র মজুদ শুরুর প্রেক্ষিতে ১৯৪৭ সালে বুলেটিন অব দি অ্যাটোমিক সায়েন্টিস্ট নামক এক সংগঠন ঘড়িটি তৈরি করে। এতে পৃথিবীর ধ্বংসের সময় নির্ধারণ করা হয় মধ্যরাত। 

১৯৪৭ সালেই বিশ্বের পরিস্থিতি ও বিভিন্ন পারিপার্শ্বিকতার কথা বিবেচনা করে মধ্যরাত থেকে মাত্র সাত মিনিট বাকি রাখা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন উদ্বেগপূর্ণ মুহূর্তে মধ্যরাতের দিকে এগিয়ে নেওয়া হয়। আবার ইতিবাচক কোনো ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সময় কমানো হয়। যেমন- ১৯৮৪ সালে ঘড়িতে মধ্যরাত হতে তিন মিনিট বাকি ছিল। পরবর্তীকালে ১৯৮৮ সালের ক্ষেপণাস্ত্র চুক্তি, ১৯৯০ এ বার্লিন দেয়াল পতন এবং ১৯৯১ এ স্নায়ুযুদ্ধ শেষ হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে মধ্যরাত থেকে সময়ের ব্যবধান দাঁড়ায় ১৭ মিনিট।   

ডুমস ডে ক্লকের’ সময় বাড়ানো বা কমানোর কাজটি করেন বুলেটিন অব দি অ্যাটোমিক সায়েন্টিস্টের বিজ্ঞানীরা। এই বিজ্ঞানীরা পরমাণু বিজ্ঞানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নোবেল পাওয়া। শুরুর দিকে ‘ডুমস ডে ক্লকের’ সময় কমাতে পারমাণবিক অস্ত্র মজুদ ও সম্ভাব্য পারমাণবিক যুদ্ধের শঙ্কাকে আমলে নেওয়া হতো। পরবর্তীকালে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবের কথা বিবেচনা করে ২০০৭ সালে এটিও যুক্ত করা হয়। ২০১২ সালে ‘ডুমস ডে ক্লকের’ সময় পাঁচ মিনিট বাকি ছিল। বর্তমানে আরো দুই মিনিট কমিয়ে দেওয়ায় মধ্যরাত হতে আর বাকি রইল তিন মিনিট। 

যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোর বুলেটিন অব দি অ্যাটোমিক সায়েন্টিস্টের কার্যালয়ে ‘ডুমস ডে ক্লকটি’ রাখা হয়েছে। ১৯৪৭ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত মোট ২২ বার ঘড়িটির সময় পরিবর্তন করা হয়েছে। 

বুলেটিন অব দি অ্যাটোমিক সায়েন্টিস্টের নির্বাহী পরিচালক কেনেট বেনেডিক্ট জানান, ২০১৫-এর ২২ জানুয়ারি ‘ডুমস ডে ক্লকে’ আরো দুই মিনিট যুক্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমানে অনিয়ন্ত্রিত জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরমাণু অস্ত্রের প্রতিযোগিতার কারণে মানবসভ্যতা হুমকির মুখে। সম্ভাব্য বিপর্যয় এড়াতে ও পৃথিবীকে রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বারবার ব্যর্থ হচ্ছেন বিশ্বনেতারা। 

বুলেটিন অব দি অ্যাটোমিক সায়েনটিস্টের বিজ্ঞানীরা জীবাশ্ম জ্বালানিদূষণ বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ ও পরমাণু অস্ত্র তৈরি বন্ধ রাখতে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। 

কেনেট বেনেডিক্ট বলেন, পদক্ষেপ গ্রহণের সময় পার এখনো আছে। তবে পদক্ষেপ গ্রহণের উপায়গুলো দ্রুত বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বিশ্ববাসীকে এখনই জেগে উঠতে হবে এবং পৃথিবী বাঁচাতে এখনই পরিবর্তন আনতে হবে। 

বিজ্ঞানীরা বলেন, এখনই যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হলে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার কমানো সম্ভব। একই সঙ্গে গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমনও কমানো সম্ভব। 

সায়েন্স অ্যান্ড সিকিউরিটি বোর্ড ও অ্যাটোমিক সায়েন্টিস্টের সদস্য এবং স্ক্রিপস ইনস্টিটিউশন অব ওশেনোগ্রাফির শিক্ষক রিচার্ড সামারভেলি বলেন, গ্রিসহাউস গ্যাস নির্গমন কমাতে তেমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। খুব শিগগির বেশি পরিমাণে গ্যাস নির্গমণ কমানো না হলে, এ শতাব্দীর শেষদিকে কার্বন ডাই-অক্সাইড ও অন্যান্য গ্রিনহাউস গ্যাস মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যাবে। এতে জলবায়ুতেও ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব দেখা দেবে। তিনি আরো বলেন, স্মরণকালের উষ্ণতম বছর ছিল গত বছর। পশ্চিম অ্যান্টার্টিকায় ক্রমাগত বরফ গলছে। জলবায়ু পরিবর্তনে কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হবে পৃথিবীর শতকোটি মানুষ। পরিবেশগত সব ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। 

বিজ্ঞানীরা একই সঙ্গে পরমাণু অস্ত্রের প্রতিযোগিতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। গবেষকরা বিশ্বনেতাদের পরমাণু অস্ত্র নিরস্ত্রীকরণ চুক্তির দিকে মনোযোগ দিতে বলেন। বর্তমানে বিশ্বে ১৬ হাজার ৩০০ পরমাণু অস্ত্র রয়েছে।

আমাদের শেষ কথা,

আমি আশা করি এই আর্টিকেলটি ভালভাবে বুঝতে পেরেছেন। আপনাদের যদি কোন রকম প্রশ্ন থাকে তাহলে কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন।

Businesses BD
Businesses BDhttps://www.businesslinear.com/
Lorem ipsum is a placeholder text commonly used to demonstrate the visual form of a document or a typeface without relying on meaningful content

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest Articles