বাংলাদেশের-অর্থনৈতি প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা, ভবিষ্যৎ এবং তার বর্তমান প্রেক্ষপট সম্পর্কিত ধারনা প্রতিটা সচেতন নাগরিকের থাকা প্রয়োজন। এটি আমাদের দেশের জন্য উন্নয়নের একটি মাপ কাঠি। একটি দেশের অর্থনীতি থেকে আমরা সে দেশের জনজীবন, উন্নয়ন, জীবনযাত্রা, যোগ্যতা, গ্রহণযোগ্যতা ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে জানতে পারি। যদিও আমাদের দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা থেকে জীবনযাত্রার মানটা বিচার করা উচিত হবে না।
আর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা বিচার-বিবেচনার মাধ্যমে আমরা দেশের ভবিষ্যৎ এবং দেশের অর্থনীতি কোন দিকে যাচ্ছে সেসম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারনা পেতে পারি। এখানে আমরা সে বিষয়গুলো নিয়েয় আলোচনা করেছি, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা, বর্তমান অবস্থা, প্রতিবন্ধকতা, দূরীকরণে উপায় এবং আরো কিছু।তো, চলুন শুরু করা যাক। তার আগে আরো জানতে এখানে ক্লিক করুন..সবচেয়ে বড় সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানগুলো সম্পর্কে
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনাঃ
বর্তমান বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বেশ চমৎকার একটা গতিতে চলছে। এশিয়াসহ সারাবিশ্বের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সাথে বাংলাদেশের অর্থনীতির তুলনামূলক কাঠামো দেখলেই আমরা বলতে পারব যে দেশের অর্থনীতি এখন কতটা মজবুত। সঠিক সিদ্ধান্ত, পরিকল্পনা ও বাজেটের অব্যর্থ লক্ষ অর্জন, দেশের সম্পদের সঠিক ব্যবহার সহ আরো কিছু বিষয় যদি নির্ভুলভাবে পরিচালনা করা যায়, তাহলে দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে।
তো কখনো এরকম ধারনা করেছেন যে, এই প্রবৃদ্ধি ধারা যদি বাংলাদেশ ধরে রাখতে পারে তাহলে দেশের অর্থনীতি কোথায় যেয়ে দাড়াবে? দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সম্ভবনা কেমন? কোথাও এবং কেমন বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির ভবিষ্যৎ?
না ভাবলেও সমস্যা নেই কারন আমরা আপনার জন্য ভেবে রেখেছি। চলুন দেখে আসি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সম্ভবনার পূর্বাভাসঃ
দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সম্ভবনা ও সুন্দর ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত। যদি না, ঈশ্বর গজব পাঠান আর ব্রাহ্মনবাড়িয়ার লোক অশান্ত হয়ে পরে। দুটোর একটা ঘটলেয় অর্থনৈতির ১২টা বেজে যাবে। যাইহোক, দুটো প্রতিবেদন দেখলে আমরা সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অবস্থান সম্পর্কে একটা সুন্দর ধারনা পাব। সেগুলো হল-
অর্থনৈতিক গবেষণা সংস্থা গুলোর মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য একটি প্রতিষ্ঠান হল, সেন্টার ফর ইকোনোমিক্স এন্ড বিজনেস। এটি ব্রিটেনের একটি সংস্থা যারা সারা বিশ্বের অর্থনীতির ভাবগতি নিয়ে কাজ করে। এ সংস্থার সর্বশেষ প্রতিবেদন বের হয় ২০২০ সালের ডিসেম্বরে, “ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক লিগ টেবল ২০২১”।
এখান থেকে আমরা দেখতে পারি যে আগামী ১০-১৫ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত অর্থনৈতিক দেশ গুলোর কাতারে সামিল হবে। ২০৩৫ সাল নাগাদ অর্থনীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান হবে ২৫ তম। আর এ প্রতিবেদন অনুযায়ী, চীন বসবে অর্থনীতির সর্বোচ্চ চূড়ায়।
দ্বিতীয় বক্তব্যটি এসেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সনামধন্য সাময়িকী ফোর্বস থেকে। ফোর্বসের সাথে আমরা সবাই কম বেশি পরিচিত। তাদের করা বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের তালিকা বহুল আলোচিত, পঠিত ও সমর্থিত। ফোর্বসের গবেষক ও বিশ্লেষকদের মতে খুব নিকট ভবিষ্যতে, এশিয়ার দেশ গুলোর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি থাকবে সবার উপরে। এবং বৈশ্বিক মোট দেশজ উৎপাদনের(জিডিপি) ৫০%-ই এশিয়া থেকে।
(প্রতিবেদন গুলি চায়ের দোকানের অর্থনীতিবিদ থেকে এবং নীলক্ষেতের ছাপানো না, অথএব বুঝতেও পারছেন এর গুরুত্ব। নো ডিজরেসপেক্ট টু দোজ ইন্টেলেকচুয়াল।)
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সম্ভবনার রুপরেখাঃ
২০১৮-১৯ সেশনে বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির হার ছিল সর্বোচ্চ, ৮.১৫ শতাংশ। এর পূর্বের অর্থবছরে পরিমাণটা ছিল, ৭.৮৬শতাংশ। বিগত দশকের তুলনায় বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হার বেড়েছিল ৬.৬ শতাংশ এবং তা গত চার বছরে ছিল ৭ শতাংশের উপরে। প্রচন্ড সম্ভাবনাপূর্ণ গতির সাথেই এগিয়ে যাচ্ছিল বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। তবে পাকা ধানে মই দেয়া প্রকৃতি এবং ইতিহাসের স্বভাব। অপার সম্ভাবনাময় প্রবৃদ্ধি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত কোভিড-১৯ মহামারীর জন্য।
মহামারী পরিস্থিতি থাকা সত্ত্বেও আমাদের অর্থমন্ত্রী নতুন অর্থ বছরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ধরেছিলেন ৮.২ শতাংশ, কারন মন্ত্রীবর্গের মতে আমরা করনার থেকেও শক্তিশালী। এটা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২০১৯-২০ অর্থবছরে। সে সময় মন্ত্রীপরিষদের এরকম উচ্চ বিলাষী ধারণা দেখে বেশ ঠাট্টা তামাশাও হয়েছিল বটে।
কিন্তু পরবর্তীতে এসে উল্লেখিত লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হয়নি। ২০১৯-২০ সালের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হার এসেছিল ৫.২৪ শতাংশ। এসময়টা সারা পৃথিবীর জন্যেও ছিল খুব কঠিন একটা সময়। লকডাউন, শাটডাউন, করেনটিন বিভিন্ন কারনে অর্থনীতি ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
পরবর্তীতে, ২০২০-২১ সালের অর্থনীতি প্রবৃদ্ধি নির্ধারণ করা হয়েছে ৭.২ শতাংশ। এ প্রবৃদ্ধি নির্ধারণের সময় বাংলাদেশের অর্থনীতি মন্ত্রী মুস্তফা কামাল বলেন, ““গত অর্থবছরে বাংলাদেশ ৫ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে, যা ছিল এশিয়ার মধ্যে সবার উপরে।”
আরও পড়ুন..
- সবচেয়ে বড় সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান
- ৩৪ কোটি টাকা বিনিয়োগ পেলেন ‘ট্রাক লাগবে’ প্রতিষ্ঠানটি
- এম এল এম মানেই কি প্রতারণা? বর্তমানে MLM এর অবস্থা
তিনি আরো বলেন, ““কোভিড পরবর্তী উত্তরণের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আগামী অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ২ শতাংশে নির্ধারণ করা হয়েছে।”
দেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির ধারাকে সচল রাখতে অনান্য খাতের প্রবৃদ্ধিও বেশ সফলতার সাথে এগিয়ে চলছে। সর্বশেষ অর্থবছর ২০১৯-২০ অনুযায়ী বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ছিল ২০৬৪ মার্কিন ডলার। বিগত দশ বছরের তুলনায় আমাদের দেশের মূল্যস্ফীতিও বেশ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে, বর্তমানে তা ৫.৬৫ শতাংশ। বাংলাদেশের রাজস্ব আয় প্রবৃদ্ধির হার তুলনামূলক কিছুটা কম। ২০১৯-২০ অর্থবছরে মোট রাজস্ব খাতে আয় ছিল, ৩৪৮০৬৯ কোটি টাকা, জিডিপি-এর ১২.৪ শতাংশ। এছাড়াও দেশের অন্যান্য খাত যেমন রপ্তানি আয়, প্রবাস আয় ইত্যাদির উন্নতি বেশ দ্রুত গতিশীল পায়ে হাটছে। এমনকি আমাদের আমদানি খাতের ব্যয় ও হ্রাস অনেক শতাংশ, যদিও মাঝে তা বেড়ে গিয়েছিল। ২০১৭-১৮-তে আমদানি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ২৫.৩ শতাংশ এবং তা ২০১৯-২০ এসে হ্রাস পেয়েছে -৮.৬ শতাংশ।
সকল উন্নায়ন ও পরিসংখ্যান বিবেচনা করলে দেখা যায়, বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি সম্ভবনা লেজেগোবরে জড়িয়ে নেই। আছে ব্যাপক সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ। যেমনটা আমরা প্রথমে বলেছি, যদি সঠিক পরিচর্যা আর শৃঙ্খলার মধ্যে দিয়ে যাওয়া হয় তাহলেও আমরাও খুব শীঘ্রই উন্নত বিশ্ব গুলোর কাতারে নাম লেখাতে পারব। এর জন্য দায়িত্ব শুধু একা সরকারের উপরে চাপালে হবে না, প্রতিটা সচেতন নাগরিককে নিজের জায়গা থেকে সর্বোচ্চটা দিয়ে কাজ করতে হবে। এভাবেই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার সফলতার সাথে এগিয়ে যাবে।
বাংলাদেশের-অর্থনৈতি সম্ভাবনায় প্রতিবন্ধকতা ও আমাদের করণীয়ঃ
আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সম্ভব হচ্ছে না বিভিন্ন কারনে। বিভিন্ন কারনে আমরা বার বার পিছিয়ে পরছি অন্যান্য দেশের সার্বিক উন্নতির তুলনায়। সব ব্যবসা বাণিজ্য, শিল্প প্রতিষ্ঠান, রাজস্ব, রপ্তানি, প্রবাসী আয় ঠিক থাকলেও কেন আমরা কাঙ্ক্ষিত অর্থনৈতিক সাফল্য অর্জন করতে পারছি না?
এর জন্য বেশ কিছু কারন দায়ী এবং মূলত আমরা নিজেরায় এর জন্য সব থেকে বেশি দায়ী। তো দেখি আসি কি কি প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি।
সর্বপ্রথম সমস্যা, আমরা দারিদ্র্যতার দূষ্টুচক্রর ফেসে গেছি। এদেশের মানুষের সঞ্চয়ের হার কম, পণ্য মূল্যের অস্থিতিশীলতা, সম্পদের ব্যবহার সম্পর্কে সঠিক জ্ঞানের অভাব। আরো বেশ কিছু কারনে আমরা দারিদ্র্যতার চক্র থেকে বের হতে পারিনা।
আর একটি বড় সমস্যা, আমাদের দেশের জনসংখ্যা খুবই বেশি। জায়গা-জমির তুলনায় মানুষের চাপ অতিরিক্ত। এর ফলে দেখা দেয় বেকারত্ব, সামাজিক সমস্যা। বাধাগ্রস্ত হয় জাতীয় আয়, মাথাপিছু আয়, মূলধন ও সঞ্চয়। বাংলাদেশের-অর্থনৈতি উন্নয়নে একটি লক্ষ্যনীয় প্রতিবন্ধকতা হল প্রযুক্তির অভাব। আমাদের দেশ এখনো অনেকাংশ মানব শ্রমের উপর নির্ভর এবং প্রযুক্তির ব্যবহারে বেশ পিছিয়ে। সাধারণত নিম্ন আয় ও মূলধনের জন্যেও এ সমস্যার তৈরি হয়েছে। এছাড়াও আরো অনেক প্রতিবন্ধকতা আছে যেমন, শিক্ষার অভাব, দক্ষ জনশক্তির অভাব, উদ্যোগতার অভাব, প্রাকৃতিক সম্পদের ঘাটতি ইত্যাদি।
এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণের জন্য আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে উন্নত করতে হবে, মানুষকে উদ্যোগী করে তুলতে হবে, পরিকল্পনা, সঞ্চয় ও মুলধনের সঠিক জ্ঞান অর্জনে সাহায্য করতে হবে, দক্ষ প্রসাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় জটিলতা দূর করতে। এরকম আরো কিছু পদক্ষেপ গ্রহন করলে আমরা বাংলাদেশের অর্থনীতির পথকে সুগম করতে পারব।
এগুলো অবশ্যই পড়বেন—
উপসংহারঃ
এই ছিল আমাদের আজকের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সম্ভবনা নিয়ে আলোচনা, আশা করি আপনার ভাল লেগেছে। এবং, আরো কিছু যদি জানতে চান তাহলে নিশ্চয় জানাবেন।
শেষ একটা বিষয় দিয়ে আমাদের আজকের আলোচনা শেষ করব। সেটা হল, আমাদের দেশের জনসংখ্যা এবং পরিবেশ খুব বেশি ভাল না। এজন্য আমাদের অর্থনৈতিক উন্নতি হলেও মানুষের জীবনযাত্রার মান অন্যান্য দেশের তুলনায় খুব বেশি একটা ভাল হবেনা। এজন্য অর্থনৈতিক উন্নায়ন ও জীবন যাত্রার মানের উন্নায়নকে গুলিয়ে ফেলবেন না।
ধন্যবাদ।