Wednesday, November 20, 2024

বর্তমান বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগের অবস্থা

বৈশ্বিক বিনিয়োগপ্রবাহে ভাটা সত্ত্বেও বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগপ্রবাহ এফডিআই (FDI) বেড়েছে। ইউনাইটেড নেশনস কনফারেন্স অন ট্রেড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আঙ্কটাড) হিসাব অনুযায়ী, ২০১৭ সালের তুলনায় ২০১৮ সালে এসে বাংলাদেশে এফডিআই–প্রবাহ বেড়েছে ৭০ শতাংশ। যদিও পরিমাণের দিক থেকে এই বিনিয়োগ এতটাই নগণ্য যে অধিক বিনিয়োগপ্রাপ্ত দেশগুলোর কাছাকাছি যেতেও আমাদের অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। 

২০১৮ সালে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পেরেছে ভারত। এর পরিমাণ ৪ হাজার ২৮৮ কোটি ডলার, যা এ অঞ্চলের আটটি দেশের মধ্যে প্রথম । দক্ষিণ এশিয়ায় মোট FDI তে ৭৮ শতাংশ পেয়েছে ভারত। আর ৩৬১ কোটি ডলার বা ৬ দশমিক ৬ শতাংশ পেয়ে বাংলাদেশ রয়েছে তৃতীয় অবস্থানে। এবং দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে মালদ্বীপ। দক্ষিণ এশিয়ার বাকি পাঁচটি দেশের চেয়ে বিনিয়োগ আকর্ষণে আমরা এগিয়ে আছি ঠিকই, কিন্তু ভারতের সঙ্গে তুলনা করলে ব্যবধানটি আসমান- জমিন।আরো পড়তে এখানে ক্লিক করুন..বাংলাদেশের-অর্থনৈতি প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা সম্পর্কে।

একসময় বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র ছিল প্রধান বিনিয়োগকারী দেশ। বর্তমানে চীন সেই স্থান দখল করেছে। নেদারল্যান্ডস ও যুক্তরাজ্যের অবস্থান যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয়। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ যে ৩৬০ কোটি ডলার বৈদেশিক বিনিয়োগ পেয়েছে, তারমধ্যে এককভাবে চীনেরই ১০৩ কোটি ডলার। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে সরকার যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ১০০ টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠন। কিন্তু সরকারের পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মধ্যে অনেক ফারাক। কোনো এলাকাকে অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘোষণা কিংবা জমি অধিগ্রহণ করলেই তো হবে না। অবকাঠামো ও যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নও নিশ্চিত করতে হবে। 

বিদেশি বিনিয়োগ আনতে যখন সরকার নানা ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছেন, তখন দেশীয়ও বিনিয়োগের অবস্থাও সন্তোষজনক নয়। বেসরকারি বিনিয়োগের হার একই জায়গায় আটকে আছে। বিনিয়োগ বাড়ানোর অন্যতম প্রধান শর্ত আস্থার পরিবেশ। কিন্তু ব্যাংকিং খাতের ধস ও শেয়ারবাজারের নাজুক পরিস্থিতি যে সেই পরিবেশ তৈরির ক্ষেত্রে প্রধান বাধা, সেটিও নীতিনির্ধারকদের স্বীকার করতে হবে। 

আরো পড়ুনঃ

দ্বিতীয়ত, অনেক সংগ্রাম করে বাংলাদেশ মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে যখন  সমুদ্রসীমা নির্ধারণ করল, তখন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, সমুদ্রসম্পদ আহরণে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। বাংলাদেশ কোটি কোটি ডলার বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে সক্ষম হবে খুব সহজেই। কিন্তু এই খাতে বিদেশি বিনিয়োগের আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। তীব্র প্রতিযোগিতার বিশ্বে হাঁটি হাঁটি পা পা করে এগিয়ে খুব বেশি দূর যাওয়া যাবে না। 

বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের প্রধান উপাদান হলো সস্তা শ্রম। কিন্তু এখন শুধু সস্তা শ্রম দিয়ে খুব বেশি বিনিয়োগ আনা সম্ভব না। সে জন্য তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে প্রশিক্ষিত জনবল তৈরিতে সর্বাত্মক প্রয়াস চালাতে হবে। একই সঙ্গে শিল্পকারখানা স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় জমি, উন্নত অবকাঠামো, যোগাযোগব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। দূর করতে হবে আমলাতান্ত্রিক জটিলতাও। সেসব শিল্প প্রতিষ্ঠার দিকে দৃষ্টি দিতে হবে, যেসব শিল্প দেশের পুঁজি বাড়াবে এবং অধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। বিনিয়োগের পূর্বশর্তগুলো পূরণ না করতে পারলে সরকারের ঘোষিত ‘উন্নয়নের রোল মডেল’ ফাঁকা আওয়াজ হয়েই থাকবে।

বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ আরও বাড়ার ইঙ্গিত মার্কিন প্রতিবেদনে:

করোনাভাইরাস (covid-19) মহামারির কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে খারাপ  অবস্থা থাকলেও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অন্যতম আকর্ষণ হিসেবে নিজের অবস্থান ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। করোনার ধাক্কা মোকাবিলা করে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারাও অব্যাহত রেখেছে দেশটি। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সম্পর্কে এসব কথা বলা হয়েছে।

গত সপ্তাহে ‘২০২১ ইনভেস্টমেন্ট ক্লাইমেট স্টেটমেন্টস’ প্রকাশ করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ গত এক দশক ধরে স্থিতিশীল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে। এবং এ দেশে রয়েছে একটি বৃহৎ, তরুণ ও কঠোর পরিশ্রমী শ্রমশক্তি, এখানকার বেসরকারি খাতও প্রাণবন্ত। দক্ষিণ এবং দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের কৌশলগত অবস্থান ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মার্কিন প্রশাসনের তথ্যমতে, তারা ১৭০টি দেশের অর্থনৈতিক বিনিয়োগ পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে ওইসব দেশ মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য কেমন বাজার হতে পারে তার ভিত্তিতে এধরনের প্রতিবেদন তৈরি করে থাকে।

গত বুধবার প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা হয়েছে, ব্যবসায়িক পরিবেশের উন্নতির জন্য সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ সরকারের প্রচেষ্টা প্রশংসনীয়, তবে সেগুলোর বাস্তবায়ন এখনো হয়নি। বাংলাদেশ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের মতো বেশ কিছু বাধা দূরীকরণে ধারাবাহিকভাবে উন্নতি করেছে। তবে অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, অর্থায়নের সীমিত উপকরণ, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, শ্রম আইন কার্যকরে শিথিলতা এবং দুর্নীতির মতো বিষয়গুলো প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগে (এফডিআই) বাধা সৃষ্টি করছে।

মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মতে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে মূলত তৈরি পোশাক শিল্প এবং প্রবাসী আয়ের ওপর নির্ভর করে। ২০২০ অর্থবছরে দেশটি ২৯ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রফতানি করেছে এবং এসময় তাদের প্রবাসী আয় এসেছে রেকর্ড ১৮ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার। তবে গত অর্থবছরে করোনা মহামারির কারণে বৈশ্বিক চাহিদা কমে যাওয়ায় বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানি ১৮ শতাংশ কমে গেছে। আরো জানতে ক্লিক করুন..সবচেয়ে বড় সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকার কৃষি-বাণিজ্য, টেক্সটাইল, চামড়াজাত পণ্য, উৎপাদন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, ইলেক্ট্রনিকস, তথ্য-প্রযুক্তি, প্লাস্টিক, স্বাস্থ্যসেবা, মেডিক্যাল যন্ত্রাংশ, ফার্মাসিউটিক্যাল, জাহাজ নির্মাণ এবং অবকাঠামোর মতো খাতগুলোতে প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগের সন্ধান করছে। এর জন্য দেশটি নিজস্ব শিল্পনীতির আওতায় এবং রফতানিমুখী প্রবৃদ্ধি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বিনিয়োগের জন্য বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধা চালু করেছে।

বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী সৌদি আরব:

সৌদি আরব বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী বলে জানিয়েছেন, দেশটির বিনিয়োগমন্ত্রী খালিদ আল ফালিহ। খালিদ আল ফালিহ বলেছেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ রয়েছে, তাই আরও বেশি সৌদি বিনিয়োগের সম্ভাবনাও আছে। সৌদি আরব সফররত প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে রোববার অনুষ্ঠিত বৈঠকে সৌদি বিনিয়োগমন্ত্রী এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন। সালমান এফ রহমানের দপ্তর থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। 

বৈঠকে সালমান এফ রহমান বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে বর্তমান সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। পাশাপাশি সৌদি বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্ধারণেরও প্রস্তাব দেন। বৈঠকে সালমান এফ রহমান বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে বর্তমান সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। পাশাপাশি সৌদি বিনিয়োগকারীদের

জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্ধারণেরও প্রস্তাব দেন। সৌদি বিনিয়োগমন্ত্রী বাংলাদেশের এ প্রস্তাবকে স্বাগত জানান। এ সময় সালমান এফ রহমান সরকারি –বেসরকারি অংশীদারত্বে সৌদি বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টিতে খসড়া সমঝোতা স্মারক চূড়ান্ত করার অনুরোধ জানান। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা আরও বলেন, সমঝোতা স্মারকটি স্বাক্ষরিত হলে বাংলাদেশের অবকাঠামোসহ বিভিন্ন খাতে সৌদি বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি হবে।

সালমান এফ রহমান দুই দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে প্রতিনিধিদল বিনিময়ের গুরুত্ব তুলে ধরে সৌদি বিনিয়োগমন্ত্রীকে আগামী ২৮ ও ২৯ নভেম্বর বাংলাদেশে অনুষ্ঠেয় আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ শীর্ষ সম্মেলনে যোগদানের অনুরোধ জানান।

এ সময় সৌদি বিনিয়োগমন্ত্রী জানান, সমঝোতা স্মারকটি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে এবং তা দ্রুত স্বাক্ষর হবে। সৌদি মন্ত্রী খালিদ আল ফালিহ বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চলে খাতভিত্তিক বিনিয়োগের বিষয়ে সহযোগিতা চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তবে এর আগে গত রোববার সালমান এফ রহমান সৌদি আরবের পরিবহনমন্ত্রী সালেহ আল জাসের সঙ্গেও বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে তিনি ঢাকা থেকে পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণে সৌদি বিনিয়োগ প্রত্যাশা করেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের পরিবহন খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা যেতে পারে। এ সময় সৌদি পরিবহনমন্ত্রী তাঁর পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান রোববার রিয়াদ চেম্বার অব কমার্সের নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। এ সময় তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সৌদি আরবে সরকারি সফরের মাধ্যমে সৌদি–বাংলাদেশ সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা–বাণিজ্য ও বিনিয়োগের নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে।

বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগের পরিবেশ:

প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বলেন, বর্তমানে সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হয়। এবং সেটা আরও বাড়ানোর জন্য তিনি জোর দাবি করেন। উপদেষ্টা দুই দেশের চেম্বার নেতাদের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সফর ও বৈঠকের ওপর গুরুত্ব দেন। পাশাপাশি দুই দেশের চেম্বার অব কমার্সের মধ্যে ২০০৫ সালে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকটি সংশোধন করে যুগোপযোগী করার প্রস্তাব দিলে সৌদি ফেডারেশন অব চেম্বার তাঁদের আগ্রহ প্রকাশ করেন। এই সকল বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, সৌদি আরব সফররত বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান মো.সিরাজুল ইসলাম, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন ও বাংলাদেশ সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সচিব) সুলতানা আফরোজ প্রমুখ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, করোনার প্রভাবে বিশ্ববাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বিদেশী বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ (ফরেন ডাইরেক্ট ইভেস্টমেন্ট বা এফডিআই) প্রবাহ কমেছে ৩১ কোটি চার লাখ ডলার। স্থানীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ দুই হাজার ৬৭০ কেটি টাকা। শতকরা হিসাবে ১০ দশমিক ৮ শতাংশ। ২০১৯ সালে বাংলাদেশে এফডিআই এসেছিল ২৮৭ কোটি ৪০ লাখ ডলার। ২০২০ সালে কমে এসেছে ২৫৬ কোটি ৩৬ লাখ ডলার।

২০১৭ সালে বিদেশী বিনিয়োগ এসেছিল ২১৫ কেটি ১৬ লাখ ডলার। ২০১৮ সালে তা বেড়ে ৩৬১ কেটি ৩৩ লাখ ডলারে দাঁড়ায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ১৫ বছরে দেশে মোট দুই হাজার ৫৫০ কোটি ৮৫ লাখ ডলার এফডিআই এসেছে। এর মধ্যে মূল পুঁজি এসেছে ৯১২ কোটি ১০ লাখ ডলার, যা মোট বিনিয়োগের ৩৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ। মুনাফা থেকে ও ঋণ থেকে বিনিয়োগ হয়েছে বাকি ৬৪ দশমিক ২৪ শতাংশ। গত বছর (২০২০) দেশে আসা মোট এফডিআইয়ের মধ্যে ৩২ দশমিক ৯ শতাংশ মূল পুঁজি, ৬১ দশমিক ১ শতাংশ মুনাফা থেকে পুনরায় বিনিয়োগ এবং ৬ শতাংশ এক কোম্পানি থেকে অন্য কোম্পানির ঋণ।

আন্তর্জাতিক রীতি অনুযায়ী, বিদেশী কোম্পানিগুলো তিনভাবে পুঁজি দেশে আনতে পারে। যেমন- ১. মূলধন হিসেবে নগদ বা শিল্পের যন্ত্রপাতি হিসেবে; ২. দেশে ব্যবসায় করে অর্জিত মুনাফা বিদেশে না নিয়ে দেশে বিনিয়োগ করতে পারে এবং ৩. এক কোম্পানি অন্য কোম্পানি থেকে ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করতে পারে। এ তিন পদ্ধতির যেকোনোভাবে বিনিয়োগ করলে তা এফডিআই হিসেবে গণ্য হবে। বর্তমানে বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগে শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি মোট বিনিয়োগের ১৬ দশমিক ৬ শতাংশ করেছে। দ্বিতীয় অবস্থানে সিঙ্গাপুর, যা মোট বিনিয়োগের ১৬ দশমিক ১ শতাংশ। তৃতীয় অবস্থানে আছে নেদারল্যান্ডসের বিনিয়োগ, যা ৭ দশমিক ৩ শতাংশ।

বর্তমানে করোনার প্রকোপ কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। ফলে এফডিআই বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। এ জন্য আমাদের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে অবকাঠামো নির্মাণ দ্রুত শেষ করা অত্যাবশ্যক। চলমান বিদেশী বিনিয়োগকারীদের সাথে যোগাযোগ আরো বাড়ানো প্রয়োজন। বিদেশী বিনিয়োগকারীরা একা বিনিয়োগ করে খুব কম। দেশী বিনিয়োগকারীদের হাত ধরে বিদেশী বিনিয়োগ আসে। এ ক্ষেত্রে কূটনৈতিক যোগাযোগ বৃদ্ধির বিকল্প নেই।

বিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য শুল্ক বাধা দূর করতে হবে। উৎপাদন ও প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে।

Businesses BD
Businesses BDhttps://www.businesslinear.com/
Lorem ipsum is a placeholder text commonly used to demonstrate the visual form of a document or a typeface without relying on meaningful content

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest Articles