প্রতিদিন সারা বিশ্বে ৬০০ কোটি ইউটিউব ভিডিও মানুষ দেখেন। পরিসংখ্যান বলছে, একজন দর্শকের ইউটিউব দেখার গড় সময়কাল ৪০ মিনিট। অর্থাৎ ইউটিউবের মাধ্যমে এক বিপুল সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে, আর তাই বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছে ইউটিউব আজ এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকরী মাধ্যম। এবং এর ফলে ঘরে বসেই অনলাইনে ইউটিউব থেকে আয়ের সুযোগ তৈরি হচ্ছে।
বাংলাদেশে এখন ইউটিউব এবং ফেসবুকের মতো সামাজিক মাধ্যমগুলোর জনপ্রিয়তা যেমন বাড়ছে, তেমনি অনেকের কাছে এগুলো অর্থ আয়ের জন্য একটি মাধ্যম হিসাবে গড়ে উঠছে।
বাংলাদেশের কোন কোন কনটেন্ট নির্মাতা ইউটিউব এবং ফেসবুক থেকে মাসে লক্ষাধিক টাকা উপার্জন করছেন। বাংলাদেশের তরুণদের অনেকেই এখন পেশাদারিভাবে ইউটিউব এবং ফেসবুকের জন্য কনটেন্ট তৈরি করছেন। এসব ভিডিও দেখা হচ্ছে অসংখ্যবার।
ইউটিউব থেকে আয় কী?
ইউটিউব থেকে আয়ের প্রধান উৎস হল বিজ্ঞাপন। আপনি আপনার ইউটিউব চ্যানেলটিকে বিজ্ঞাপন দাতাদের ব্যবহার করতে দেবেন এবং পরিবর্তে আপনি তাদের থেকে টাকা পাবেন। অর্থাৎ আপনার ইউটিউব ভিডিওর শুরুতে বা মাঝে বিজ্ঞাপনদাতারা তাঁদের বিজ্ঞাপন দেখাবেন আর আপনি ইউটিউব থেকে রোজগার করবেন।
এছাড়া, চ্যানেল মেম্বারশিপ, সুপার চ্যাট, পণ্য বিক্রি, ইউটিউব প্রিমিয়াম ইত্যাদি বিভিন্নভাবেই ইউটিউব থেকে টাকা রোজগার করা সম্ভব।
ইউটিউব থেকে আয়ের উপায়:
ইউটিউব থেকে আয় করতে হলে আপনাকে প্রথমেই একটি ইউটিউব চ্যানেল খুলতে হবে। আপনার জি-মেল অ্যাকাউন্টের সাহায্যে সম্পূর্ণ বিনামূল্যেই নিজের ইউটিউব চ্যানেল খুলতে পারবেন।
আরো পড়ুন:
তবে ইউটিউব চ্যানেল খুললে এবং লোকে সেই ভিডিও দেখলেই সেখান থেকে আয় হবে না। ইউটিউব থেকে আয় করার জন্য আপনাকে ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রাম-এ আপনার চ্যানেলকে নথিভুক্ত করতে হবে। আপনার চ্যানেল-কে ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রামে নথিভুক্ত করার পরই ইউটিউব বিভিন্ন বিজ্ঞাপনদাতাদের ভিডিও সেখানে দেবে। এবং ও আপনি সেখান থেকে টাকা পাবেন।
ইউটিউব পার্টনাশিপ প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করার জন্যও আপনাকে কয়েকটি প্রাথমিক শর্ত পূরণ করতে হবে। সেই শর্তগুলি পূরণ হলে শুধুমাত্র তখনই আপনি এই প্রোগ্রামে অংশগ্রহণের জন্য আবেদন করতে পারবেন। ইউটিউব পার্টনারশিপ প্রোগ্রামে অংশগ্রহণের শর্তগুলি হলঃ
- আপনার চ্যানেলে অন্ততপক্ষে ১০০০ জন সাবস্ক্রাইবার থাকতে হবে।
- শেষ ১২ মাসে আপনার চ্যানেলের ৪,০০০ ভ্যালিড পাবলিক ওয়াচ আওয়ার থাকতে হবে।
- আপনার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে একটি গুগল্ অ্যাডসেন্স অ্যাকাউন্ট সংযুক্ত থাকতে হবে।
আপনি চাইলে আপনার চ্যানেল সেটিং থেকে নোটিফিকেশন অন করে রাখতে পারেন। সেক্ষেত্রে এই শর্তগুলি পূরণ হলে ইউটিউব থেকে আপনাকে নোটিফাই করা হবে। এই শর্তগুলি একবার পূরণ হয়ে গেলেই আপনি ইউটিউব পার্টনারশিপ প্রোগ্রামে অংশগ্রহণের জন্য আবেদন জানাতে পারবেন।
ইউটিউব পার্টনারশিপ প্রোগ্রামে আবেদন করবার প্রক্রিয়া জানতে গুগলের এই নির্দেশাবলী পড়ুন ।
বর্তমানে ইউটিউব থেকে ইনকাম করার সব থেকে জনপ্রিয় উপায় গুলো হলো:
১.গুগল আ্যাডসেন্স:
গুগল অ্যাডসেন্স হচ্ছে গুগল পরিচালিত একটি ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন। এটি মূলত একটি লাভ-অংশীদারি প্রকল্প যার মাধ্যমে গুগল ও তার ব্যবহারকারী তাদের ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপন প্রচার করে অর্থ উপার্জন করতে পারেন। ফলে বিজ্ঞাপন নিজের ভিডিও গুলোতে দেখিয়ে সহজেই ইনকাম করতে পারেন লাখ লাখ টাকা।
অ্যাডসেন্স থেকে ভালো আয় করার প্রথম শর্তই হচ্ছে ভিজিটরের চাহিদা মাফিক অরিজিনাল এবং কোয়ালিটি সম্পন্ন কন্টেন্ট নিয়মিত ওয়েবসাইটে পাবলিশ করা।
তাই ব্লগে প্রচুর পরিমাণে নিত্যনতুন ইউনিক ভিজিটর পেতে অবশ্যই নিয়মিত নতুন নতুন আর্টিকেল পোস্ট করতে হবে। এসইও অনুসরণ করে ব্লগে ভালোমানের কনটেন্ট শেয়ার করলেই ভিজিটর ও আয় দুটিই বাড়তে থাকবে
২.পণ্য বিক্রয় করে আয় করা:
নিজেদের পণ্য বিক্রয় করে আয় করার একটি সহজ উপায় হলো যেসব ইউটিউবারদের অনেক বেশি ফ্যান থাকে তাদের জন্য এটি সহজ হয়ে থাকে। তখন সেই চ্যানেলের লোগো দিয়ে টি-শার্ট, চাবির রিং, ব্যাগ ইত্যাদি তৈরি করে সেটা চ্যানেলের ফ্যানদের কাছে বিক্রি করা যেতে পারে এবং সেটি বিভিন্ন দেশেও অনেক বেশি প্রচার হতে পারে।
এখন এভবেই বেশিরভাগ ইউটিউবাররা প্রচুর পরিমাণে অর্থ উপার্জন করছেন এবং সহজে অনেক অর্থের মালিক হচ্ছেন। এটি হচ্ছে ইউটিউবারদের আয়ের অন্যতম একটি সহজ উপায়।
৩.আ্যাফিলিয়েট লিংকের মাধ্যমে ইনকাম:
তখন এই লিংকে যেই ক্লিক করে পণ্যটি ক্রয় করবেন তার থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা আপনি কমিশন হিসেবে পেয়ে যাবেন। এতে কোম্পানির লাভের সাথে সাথে আপনারও লাভ হয়ে যাবে। যার মাধ্যমে তাদের কোম্পানির পণ্য বিক্রয়ের সাথে সাথে তাদের কোম্পানির মার্কেটিংও হয়ে যাচ্ছে। এতে কোম্পানিটিও বেশ লাভবান হচ্ছে।
৪.ডোনেশন:
আপনার ভিডিওগুলো কিছু সংখ্যক দর্শকের কাছে বেশ জনপ্রিয়; কিন্তু আয় হচ্ছে না! চ্যানেলের ফ্যানরাও চায় আপনি নিয়মিত ভিডিও তৈরি করেন। প্যাট্রেয়ন নামক একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ওই ফ্যানরাই আপনাকে ডোনেশন দিয়ে যাবে। এই টাকায় আপনি ভিডিও তৈরি চালিয়ে যেতে পারবেন। এই ডোনেশন সিস্টেমটি রাতারাতি কাউকে বড়লোক বানিয়েও দিতে পারে!
৫.অনলাইন কোর্স বিক্রি করে ইউটিউব থেকে আয়:
আপনি যদি কোনো শিক্ষামূলক ইউটিউব চ্যানেল চালান, সেক্ষেত্রে আপনি যা শেখান তার সেরাটা দিয়ে তৈরি করতে পারেন অনলাইন কোর্স। এছাড়াও আপনার ভিডিও এর কোনো নির্দিষ্ট ব্যাপার যদি ভিউয়াররা শিখতে ইচ্ছুক হয়, সেক্ষেত্রে অনলাইন কোর্স সেল করা হতে পারেন ইউটিউব থেকে আপনার আয়ের একটি উৎস।
আরো পড়তে পারেন:
- বর্তমান বাংলাদেশের বেস্ট লাভজনক ব্যবসার আইডিয়া
- বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য ১০ টি সেরা ব্যবসার ধারণা
- ৩৪ কোটি টাকা বিনিয়োগ পেলেন ‘ট্রাক লাগবে’ প্রতিষ্ঠানটি
৬. ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রাম থেকে আয়:
ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রামে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে শুধুমাত্র এডসেন্স নিয়ে টাকা আয় করা যায় তা নয়, এর পাশাপাশি আরো অনেক সুবিধা পাওয়া যায় ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রামে যুক্ত হয়ে।
ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রামে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে ইউটিউব প্রিমিয়াম সাবস্ক্রিপশন ফিস, সুপার চ্যাট, চ্যানেল মেম্বারশিপ প্রোগ্রাম ইত্যাদি সুবিধা পাওয়া যায়। ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রামে যুক্ত হতে আপনার দরকার হবে একটি ইউটিউব চ্যানেল এর।
৭.ভিডিও এডিটিং সার্ভিস দিয়ে আয়:
অর্থের বিনিময়ে ভিডিও এডিটিং সার্ভিস প্রদান করতে পারেন অন্য ইউটিউবারদের। এছাড়াও বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং প্লাটফর্মেও ভিডিও এডিটিং এর কাজ করে ভালোই আয় করা যায়। ভিডিও এডিটিং অত্যন্ত ডিমান্ডিং একটি সার্ভিস। তাই এই বিষয়ে পারদর্শিতা থাকলে অন্যদের সাহায্য করে আয় করতে পারেন।
আমার শেষ কথা:
ইউটিউব চ্যানেল থেকে আয় করার উপায় আমি আপনাদের স্টেপ বাই স্টেপ ভালো করে বুঝিয়ে দিলাম৷ তার সাথে, ইউটিউব থেকে কত টাকা আয় করা যায় তা আমি আপনাদের বললাম৷
এখন আমি আপনাদের একটা অনেক জরুরি কথা বলে দিতে চাই। আপনাকে প্রথমে অনেক ভালোকরে কাজ করতে হবে৷ ভালো ভালো ভিডিও বানাতে হবে যাতে লোকেরা আপনার ভিডিও দেখে আনন্দ পান।
প্রথমে টাকা আয় করার কথা একদম ভাববেননা। চ্যানেল বানিয়ে ১ থেকে ৩ মাস কেবল মন দিয়ে কাজ করুন৷ বাস একবার আপনার চ্যানেলে থাকা ভিডিও লোকেদের ভালো লেগেগেলে আপনার subscriber বাড়তে থাকবে আর তখন আপনি নিজের চ্যানেল দিয়ে ভালো মতো টাকা আয় কোরতে পারবেন৷ নিজের চ্যানেলকে আপনি একটা business হিসেবে চালিয়ে নিতে পারবেন৷
কিভবে ইউটিউব থেকে টাকা আয় করা যাই, এই বিষয়ে কিছু জ়ানার থাকলে অবশ্যই Comment করে জানাবেন।