ব্যথা, বেদনাবিহীন অনায়াসে মৃত্যু! সময় লাগবে ১ মিনিটেরও কম। এমনই এক যন্ত্রের আইনি স্বীকৃতি দিলেন সুইজারল্যান্ড। হ্যাঁ, ঠিকই পড়েছেন আপনি। সুইৎজারল্যান্ডে আত্মহত্যা করা এখন অন্যান্য দেশের নাগরিক দের মত নাগরিকদের বৈধ অধিকার। আর তাই আত্মঘাতী হওয়ার জন্য সে দেশে রাতারাতি তৈরি হয়েছে বিশেষ একটি যন্ত্রের। যন্ত্রটি দেখতে অনেকটা কফিন আকৃতির মত। কফিন আকৃতির ওই যন্ত্রে কৃত্রিম উপায়ে অক্সিজেন ও কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ কমিয়ে ১ মিনিটেরও কম সময়ের মধ্যে মৃত্যু ডেকে আনা হয়। আর এই যন্ত্রের নাম দেওয়া হয়েছে ‘সারকো’।
আত্মহত্যায় সমর্থনঃ
সুইৎজারল্যান্ডের আত্মহত্যা করার এই যন্ত্রের নাম (Sacro Suicide Capsule). একটি অদ্ভুত নাম দেওয়া হয়েছে আত্মহত্যা করার এই যন্ত্রকে। এক্সিট ইন্টারন্যাশনালের তৈরি এই (Sacro Pod Capsule) আসলে একটি ডেথ কফিন। যা একটি মানুষকে আত্মঘাতী হতে সাহায্য করে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘এগজিট ইন্টারন্যাশনাল’ এই যন্ত্রটি তৈরি করেছেন। সংস্থার কর্মকর্তা ফিলিপ নিটশে, যিনি ‘ডক্টর ডেথ’ হিসেবেও পরিচিত, রয়েছেন এই যন্ত্রের উদ্ভাবনের নেপথ্যে। পরিসংখ্যান বলছে সুইৎজারল্যান্ডে আত্মহত্যায় সাহায্যের ঘটনা আখছার ঘটে। বলা হচ্ছে, যারা অসুস্থতার কারণে চলাফেরা করতে পারছেন না, তাদের জন্যই এই মেশিন তৈরি করা হয়েছে। ২০২০ সালেই ১৩০০ ব্যক্তিকে আত্মহত্যায় সহায়তা করা হয়েছিল। এক্সিট এবং ডিগনিটাস নামে দুই সংস্থা তাদের আত্মঘাতী হতে সহায়তা করেছিল।
(Sarco Suicide Capsule) কী?
কপিন শেপের এই মেশিনটি থ্রি-ডি টেকনোলজিতে তৈরি। এখন কীভাবে কাজ করবে এই যন্ত্রটি? এই মেশিনটি ভেতর থেকে চালু করা যাবে। স্বেচ্ছায় আত্মহত্যা করতে চাইলে প্রথমে ডেথ কফিনটির মধ্যে প্রবেশ করে শুয়ে পড়তে হবে সেই ব্যক্তি কে। তারপর সেই ব্যক্তিকে মেশিনের ভেতরেই কিছু প্রশ্ন অটোমেটিক ভয়েসে করা হবে। প্রশ্নের উত্তরগুলি দেওয়ার পর মেশিনটিকে সুইচ টিপে অ্যাক্টিভেট করে দিতে পারবেন তিনি। এরপর ধীরে ধীরে নিজের কাজ শুরু করবে ক্যাপসুলটি। এক মিনিটের মধ্যেই বেদনাহীন মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়বেন তিনি।
এক্সিট ইন্টারন্যশনাল জানিয়েছেন, সুইচ টেপার সঙ্গে সঙ্গে ক্যাপসুলটির ভেতরে নাইট্রোজেনে ভরে যাবে। ফলে অক্সিজেনের মাত্রা নিজে থেকেই কমে যাবে। আর এতে প্রথমত একটু অস্বস্তিবোধ করলেও তারপর জ্ঞান হারাবেন ভেতরে শুয়ে থাকা ব্যক্তি। যন্ত্রের ভিতরে থাকা ব্যক্তি হাইপোক্সিয়া এবং হাইপোক্যাপনিয়ায় আক্রান্ত হবেন। এবং মাত্র এক মিনিটের মধ্যেই ঢোলে পড়বেন মৃত্যুর কোলে। কোনও আতঙ্ক, দম বন্ধ করা পরিস্থিতি গ্রাস করবে না তাকে। এমনকী কোনও অনুভূতিই হবে না ওই ব্যক্তির।
জানা গিয়েছে, পরবর্তী ক্যাপসুলটিতে ভেতরে একটি ক্যামেরা রাখারও ব্যবস্থা করা হচ্ছে। যাতে মৃত্যুর ঠিক আগের মুহূর্তে একজন ব্যক্তির শেষ ইচ্ছা বাইরে থাকা অন্যরা জানতে পারেন।
সংস্থার দাবি, তারা বলেছেন বাইরে থেকে যন্ত্র নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি ভিতর থেকেও নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। সুতারাং মৃত্যুর প্রত্যাশায় যে ব্যক্তি ওই যন্ত্রের ভিতর ঢুকবেন, তিনি নিজেও যন্ত্রটি চালাতে পারবেন। এখানেই রয়েছে মূল সমস্যা। সাধারণত মরণেচ্ছু ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, এই পরিস্থিতিতে তারা অচেতন হয়ে পড়েন। পেশীশক্তি ব্যবহার করে কোনো কাজ করার মতো পরিস্থিতি তাদের থাকে না। এই যন্ত্রে তারও সমাধান করা গেছে বলে দাবি সংস্থাটির।
আরও পড়ুন:
এগজিট ইন্টারন্যাশনাল’-এর দাবি, ওই পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে শুধুমাত্র চোখের পাতার নড়াচড়া আঁচ করেই যন্ত্র সংকেত গ্রহণ করতে পারবে। এমনই দাবি ব্রিটেনের একটি দৈনিক সংবাদপত্রের। সংস্থা জানিয়েছেন, যেখানে ইচ্ছা প্রয়োজন মত সেখানেই নিয়ে যাওয়া যাবে সারকোকে। মূল মেশিন থেকে সারকোকে আলাদা করলে তা দেখতে হবে অনেকটা কফিনের মতো। সেই কফিনে এক বার শুয়ে পড়লেই সব শেষ!
বর্তমানে এই গোটা ব্যাপারটির জন্য চিকিৎসকের সহায়তার প্রয়োজন রয়েছে। মেশিনের মধ্যে সোডিয়াম পেন্টোবার্বিটাল কেমিক্যাল ভরার জন্য চিকিৎসদের সাহায্যের দরকার পরবে। এই ড্রাগের সাহায্যেই একজন ব্যক্তি খুব সহজেই ধীরে ধীরে কোমায় চলে যান। ফলে যার পরবর্তী অবস্থা মৃত্যু। কিন্তু, ফিলিপ নিশকে জানান, চিকিৎসক কিংবা কোনও ড্রাগ ছাড়াই একজন মানুষ নিজের কন্ট্রোলে মৃত্যুর দিকে যাবেন, এটাই আমাদের উদ্দেশ্য। তাই এই পদ্ধতিকে আরও আপগ্রেড করতে চায় এক্সিট ইন্টারন্যাশনাল।
ডাঃ নিটস্কে বলেন, ‘সব ঠিক ঠাক থাকলে আগামী বছরের মধ্যে সারকো ব্যবহারের উপযোগী হয়ে যাবে সুইজারল্যান্ডে। এটি সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্রকল্প, তবে আমরা এটির খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছি। তিনি আরও বলেন এখনও পর্যন্ত দুটি এরকম ক্যাপসুল তৈরি করা হয়েছে। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী বছরের মধ্যে নেদারল্যান্ড থেকে তৃতীয় ক্যাপসুলটি উদ্বোধন করা হবে।
তবে এমন যন্ত্র তৈরি করা নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে।দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট জানিয়েছে যে, কিছু লোক যেভাবে মেশিনটি ব্যবহার করছিল তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। লোকেরা বলছে যে এটি একটি বিপজ্জনক গ্যাস চেম্বার। কেউ কেউ বলছেন, এই যন্ত্র মানুষকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করবে।
আত্মহত্যায় সাহায্য আর যন্ত্রণাহীন মৃত্যু কি এক?
এটা কোন ভাবেই এক না। আত্মহত্যায় সাহায্য আর সুন্দর মৃত্যু এক নয়। ব্রিটেনের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের মতে যন্ত্রণাহীন মৃত্যু একজন মানুষের কষ্ট লাঘবের জন্য প্রাণ শেষ করে দেওয়ার পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে একজন চিকিৎসক একটি মারণ ড্রাগ প্রেসক্রাইব করেন। যা গ্রহণ করে একজন অত্যধিক অসুস্থ ব্যক্তি নিজের প্রাণ শেষ করতে পারেন খুব সহজেই। কিন্তু, আত্মহত্যায় সাহায্য করার অর্থ, কোনও ব্যক্তিতে চিকিৎসা পদ্ধতির সাহায্য ছাড়াই আত্মঘাতী হতে সহায়তা করা। সুইৎজারল্যান্ডে কোনও চিকিৎসকের আত্মহত্যায় সহায়তা করার অনুমতি নেই। বর্তমানে ভারতে ইউথেনেশিয়া এবং আত্মহত্যায় সাহায্য করার বিষয়টি আইনত অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়।